গ্ল্যামার আর ঝলমলে আলোয় ভরা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আড়ালে লুকিয়ে আছে অনেক অন্ধকার। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল কাস্টিং কাউচ, যার শিকার হয়েছেন বহু খ্যাতনামা অভিনেত্রী। অনেক সময় তাঁরা ক্যারিয়ারের একেবারে শুরুর দিকে এমন ঘৃণ্য অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন, যেগুলি মনে পড়লেও আজও শিউরে ওঠেন। ঠিক এমনই এক অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ্যে এনেছিলেন ‘দ্য কপিল শর্মা শো’তে ‘বুয়া’ চরিত্রে জনপ্রিয় হওয়া অভিনেত্রী উপাসনা সিংহ। বহু বছর পর যখন তিনি এক পরিচালকের নোংরা আচরণ নিয়ে মুখ খুললেন, তখন মানুষ হতবাক।
উপাসনা সিংহ ‘জুড়োয়া’, ‘ম্যায় প্রেম কি দিওয়ানি হুঁ’, ‘জুদাই’ এবং ‘কমেডি নাইটস উইথ কপিল’-এ তাঁর অসাধারণ অভিনয়ের জন্য পরিচিত। এক সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর কেরিয়ারের একেবারে শুরুর দিনের এক অত্যন্ত বিরক্তিকর এবং বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছিলেন। বয়স তখন মাত্র ১৭। তিনি এক বিখ্যাত দক্ষিণী সিনেমার একজন বড় চলচ্চিত্র পরিচালকের নোংরা কর্মকাণ্ডের পর্দাফাঁস করেছিলেন। উপাসনা জানান, তাঁর কথাবার্তা শোনার পর থেকেই চলচ্চিত্রজগত সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি একেবারে বদলে গিয়েছিল।
উপাসনা জানান, এক বিখ্যাত দক্ষিণী পরিচালক তাঁকে বলিউড সুপারস্টার অনিল কাপুরের সঙ্গে একটি ছবির জন্য সাইন করেছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই সেই সময় তিনি এই সুযোগ নিয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত ছিলেন। তবে উচ্ছ্বাস সামলেই সাবধানতা অবলম্বন করতেও ভুলতেন না। পরিচালকের অফিসে গেলে মা কিংবা বোনকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। একদিন পরিচালক খেয়াল করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন কেন তিনি সবসময় পরিবারের কাউকে নিয়ে আসেন। এই প্রশ্নে উপাসনার খারাপ লাগলেও তখনও তিনি কিছু বলেননি।
কেরিয়ারের সেই শুরুতেই সংগ্রামের কষ্ট তিনি টের পাচ্ছিলেন। উপাসনা আরও জানান, এক রাতে প্রায় সাড়ে এগারোটায় পরিচালক তাঁকে ফোন করে হোটেলে ‘সিটিং’-এর জন্য ডাকেন। হঠাৎ রাতের সেই আমন্ত্রণে তিনি প্রথমে দ্বিধা বোধ করেন এবং পরে জানান যে তিনি বরং পরের দিন গল্প শুনতে চান, কারণ তখন তাঁর কাছে হোটেলে পৌঁছনোর কোনও গাড়ি ছিল না।
উপাসনার কথা শোনার পর যখন পরিচালক তাঁকে জোর দিয়ে বলেন, “তুমি সিটিং-এর মানে বুঝছ না”, তখন তাঁর মনে ভীষণ অস্বস্তি তৈরি হয়। তবুও তিনি পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করে পরে সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু সারা রাত অস্বস্তি তাঁকে ঘিরে ধরে রেখেছিল, ঘুমও আসেনি।
পরের দিন না চাইলেও তিনি বান্দ্রায় পরিচালকের অফিসে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন পরিচালক অন্য কিছু লোকের সঙ্গে মিটিংয়ে ব্যস্ত। তাঁর সহকারী উপাসনাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন। সেই সময় তিনি আবেগের তীব্র ঝড়ে ভেসে যাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেননি। হঠাৎ রাগ সামলাতে না পেরে মিটিং রুমে ঢুকে পরিচালককে সবার সামনে চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি বলেন, “তখন আমার মধ্যে থাকা সরদারনি জেগে উঠেছিল।” প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে তিনি খোলাখুলিভাবে পাঞ্জাবিতে তাঁকে গালাগাল দেন।
এই ঘটনায় উপাসনা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পরবর্তী সাত দিন তিনি নিজেকে ঘরে বন্ধ করে রাখেন। কান্না থামছিল না। তিনি বলেন, “বারবার মনে হচ্ছিল, আমি মানুষকে কী বলব?” সমাজ আর ইন্ডাস্ট্রির চোখের সামনে আসতে ভয় পাচ্ছিলেন।
তবে ধীরে ধীরে তিনি নিজেকে সামলান। সেই যন্ত্রণা থেকেই তিনি শক্তি খুঁজে নেন। এই ঘটনার বহু বছর পর আজও তিনি মনে করেন, সেই সময়কার কষ্টই তাঁকে আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।
