বাংলা সিনেমায় এর আগে এমন ঘটনা খুব একটা দেখা যায়নি। ৫৪টা কাটছাঁটের পর গত মাসেই সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়েছিল ‘দি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’ ছবটির। অবশ্য অ্যাডাল্ট সার্টিফিকেটের সঙ্গে! অর্থাৎ শুধুই প্রাপ্তবয়স্করা দেখতে পারবেন ঋষভ-সৌরভ-পায়েলের ‘দি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’। ছবি মুক্তি পাচ্ছে আগামী ১৪ই নভেম্বর ২০২৫। এবং সেই ছবিই এবার মুক্তি পাচ্ছে ‘শিশু দিবস’-এ! তাই আগেভাগেই পরিচালক জয়ব্রত দাশের বিধিসম্মতি সতর্কীকরণ, “সপরিবারে দেখবেন না এই ছবি!” সম্প্রতি, দক্ষিণ কলকাতার এক শপিং মলে ছবির ট্রেলার মুক্তি পেল। উদ্বোধন করলেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। এই ট্রেলার দেখে মুগ্ধ ‘জাতিস্মর’-এর পরিচালকও। ছবির কলাকুশলীদের ভূয়সী প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন তিনি।
গল্প ঘোরে এক বিরল ও অমূল্য অ্যান্টিক মদের বোতল ঘিরে। কিছু ক্রিমিনাল মিলে সেই বোতল চুরির প্ল্যান করে, আর তারপরই শুরু হয় প্রতারণা, পরকীয়া, চুরি-ডাকাতি ও বিশ্বাসঘাতকতার টানটান দৌড়। নির্মাতাদের দাবি, পরিকল্পনা, অ্যান্টি-প্ল্যান, প্রতিশোধ, এবং প্রলোভনের খেলার পরতে পরতে উত্তেজনায় ভরা চিত্রনাট্য দর্শককে নিঃশ্বাস নিতে দেবে না। টলিপাড়ায় গুঞ্জন, বাংলা ছবিতে এরকম ‘বোল্ড’ ও ‘বিস্ফোরক’ যৌন দৃশ্য আগে খুব একটা দেখা যায়নি। ফলে দর্শকও অপেক্ষায় অন্য ধারার পরীক্ষামূলক সিনেমা দেখতে।
‘দি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’ ছবির পরিচালক জয়ব্রত দাস আজকাল ডট ইন-কে বললেন, "আমাদের ছবি অনেকটাই আলাদা কারণ , আমাদের ছবিতে যে ন্যারেটিভ স্টাইল আর ভিজ্যুয়য়াল ট্রিটমেন্ট আমরা ব্যবহার করেছি, সেটা অন্যান্য ছবিতে খুব একটা ব্যবহার হয় না। ন্যারেটিভ প্রগ্রেশনের জন্য আমরা লাইভ অ্যাকশন এর সঙ্গে অ্যানিমেশনেরও ব্যবহার করেছি। থ্রিলার আর কমেডির ঘরানা মিশিয়েছি, লেখালিখির স্তর থেকেই। তাই শুধুমাত্র ভায়োলেন্সের উদযাপন নয়, এই ছবি অন্যান্য ছবির থেকে অনেকাংশেই আলাদা হবে।”

ছবির নির্মাণ প্রক্রিয়াটাও কম টালমাটাল নয়। ফিল্ম ইনস্টিটিউটের বন্ধুদের সঙ্গে মিলে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে, নিজের অর্থেই চার বছর ধরে এই ছবি তৈরি করেছেন জয়ব্রত। কখনও ফান্ড শেষ, কখনও শুট বন্ধ-তবুও হাল ছাড়েননি পরিচালক। অবশেষে ছবিটি দাঁড়িয়েছে এক নিখাদ টিমওয়ার্কের প্রতীক হিসেবে।ছবিতে অভিনয় করেছেন রুদ্রনীল ঘোষ, সৌরভ দাস, পায়েল সরকার, ঋষভ বসু, রাহুল অরুণোদয় ব্যানার্জি, অনুরাধা মুখার্জি, সুদীপ মুখার্জি, অমিত সাহা, অনিন্দ্য পুলক ব্যানার্জি, রানা বসু ঠাকুর ও অঞ্জন রায় চৌধুরী প্রমুখ।
এ প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন পরিচালক- কোনও অভিনেতাই শুটিংয়ের সময় শুধুমাত্র অভিনয় করব এবং এটাই শুধু আমার কাজ- এই ভাবনাতে থেমে থাকেননি! একেবারে নিজেদের সিনেমা মনে করে সমস্ত ব্যাপারে তাঁরা সাহায্য করেছেন। রুদ্রনীল ঘোষ এর সঙ্গে পরিচয় না হলে এই ছবিটি হয়তো তৈরি হত না। আমি ওঁকে গল্পটা শোনানোর পরে, নিজেই বলেন আমি তোর ছবিটা করব এবং টাকাপয়সা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। এবং আমি ইন্ডাস্ট্রির ‘আউট সাইডার’ বলে কোনও অভিনেতাকেই ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম না যাঁরা আমাদের ছবিতে অভিনয় করেছেন। রুদ্রনীলদা নিজে সমস্ত অভিনেতা অভিনেত্রীদের সাথে আমার যোগাযোগ করিয়ে দেন এবং আমি সবাইকেই গল্পটা শোনাই এবং অবিশ্বাস্যভাবে প্রত্যেকজন গল্প শুনে একই কথা বলেন এবং রাজি হয়ে যান আমাদের ছবিতে অভিনয় করার জন্য। ঋষভ বসু অভিনয় এর পাশাপাশি এই ছবিতে সহযোগী পরিচালক, এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার এমনকি সাউন্ড রেকর্ডিং-এরও কাজ করেছেন ছবির শুটিং চলাকালীন।
সৌরভ দাস, পায়েল সরকার সুদীপ মুখার্জি, অনুরাধা, রাহুল ব্যানার্জি সকলেই বিভিন্ন সময় অভিনয় ছাড়াও ছবির বিভিন্ন দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন।
ঋষভ বসু আজকাল ডট ইন-কে বললেন, “গত চার বছর ধরে এই ছবিটি তৈরি হয়ে পড়েছিল। নানান সমস্যার কারণে। আমি কিন্তু হাল ছাড়িনি। নির্মাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে গিয়েছি। ছোটাছুটি করে গিয়েছি। আসলে, এই ছবিটি আমার হৃদয়ের খুব কাছের। কারণ এই ছবির সঙ্গে নিজেকে যেভাবে জড়িয়ে ফেলেছিলাম, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তা এখনও পর্যন্ত অন্য কোনও ছবির সঙ্গে যুক্ত হইনি। কারণ ছবিটি যারা তৈরি করেছে, সেই দলের কেউ আমার বয়সী কেউ বা আমার থেকেও ছোট বয়সে। সুতরাং প্রাণপণ খেটেছিলাম। আরও একটা কথা, আমরা যাঁরা স্করসেসি, ট্যারেন্টিনো ছবির ঘরানার ভক্ত এ ছবি প্রথমত তাঁদের জন্য। বাংলায় যে এত স্টাইলাইজড ছবি তৈরি হতে পারে, এ ছবি-ই সেকথার জলজ্যান্ত প্রমাণ! জোর গলায়, বলতে চাই এই কথাটাও এই ছবি সব বয়সী দর্শকের ভাল লাগবে এই আশা রাখলেও যুব প্রজন্ম অর্থাৎ ১৮-৩৫ বছরের যে স্লটটা-সেই বয়সী দর্শককে প্রেক্ষাগৃহে বেশি করে টেনে আনতে পারে এই ছবি। আমার অন্তত দৃঢ় বিশ্বাস।”
ছবিটি শেষ পর্যন্ত প্রযোজনা সহায়তা পেয়েছে সৌম্য সরকার ও প্রমোদ ফিল্মসের কর্ণধার প্রতীক চক্রবর্তীর। প্রতীকের কথায়, “বাংলায় পাল্প অ্যাকশন কমেডি জঁরটা এখনও অজানা। আমরা চাই এই সাহসী ছবিটা দর্শকের কাছে পৌঁছোক।” গত জুলাই মাসেই ছবি মুক্তির কথা থাকলেও, সবুজ সংকেত মেলে অবশেষে অক্টোবরে। মুক্তির নতুন তারিখ, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, অর্থাৎ শিশু দিবসেই।
