বলিউড এবং টলিউড। দু’দিকের দুই ইন্ডাস্ট্রি। তবু মিল বিস্তর। ‘ফ্যামিলি ম্যান ৩’ দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতেই দর্শকদের মধ্যে শুরু নতুন আলোচনা। বিষয় মনোজ বাজপেয়ী অভিনীত এই গোয়েন্দা থ্রিলার এবং বাংলা ব্লকবাস্টার ‘রক্তবীজ ২’–এর মধ্যে বিষয়গত সাদৃশ্য। দুই প্রোজেক্টই জাতীয় নিরাপত্তা–কেন্দ্রিক কাহিনি নিয়ে এগোয়। দুইয়েই রয়েছে জটিল চরিত্র, তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক ইঙ্গিত এবং বাস্তবভিত্তিক গল্প বলার প্রবণতা।
চরিত্রদের আবেগের তীব্রতা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং মাটির গন্ধ মেশানো গল্প বলার ধরন— ‘ফ্যামিলি ম্যান ৩’ এবং ‘রক্তবীজ ২’-এ দেখা মিলেছে এ সব উপাদানেরই।
দুই কাজের অন্যতম উল্লেখযোগ্য সংযোগ হল সীমা বিশ্বাস। ‘রক্তবীজ ২’এ তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চরিত্রে দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ‘ফ্যামিলি ম্যান ৩’এ আবার সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে।
সীমার কথায়, “দু’টি চরিত্রই সম্পূর্ণ ভিন্ন শক্তি, আবহ ও আবেগ দাবি করেছিল। ‘রক্তবীজ ২’-এ রাজনৈতিক টানাপোড়েন মূলত বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে, আর ‘ফ্যামিলি ম্যান’-এ সেই প্রেক্ষাপট একেবারে বদলে যায়। কিন্তু দু’টি অভিজ্ঞতাকে আমার কাছে এক সুতোয় বেঁধেছে নেতৃত্বের মানবিক দিক—ভয়, দায়িত্ববোধ, আর প্রতিটি সিদ্ধান্তের ওজন। দর্শক এই বৈপরীত্যকে দেখছেন এবং তার প্রশংসা করছেন—এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
দুই কাহিনি নায়কদের মধ্যেও মিল রয়েছে। ‘রক্তবীজ ২’এর কেন্দ্রে আবির চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্র পঙ্কজ সিংহ এবং ‘ফ্যামিলি ম্যান’এর কেন্দ্রে শ্রীকান্ত তিওয়ারি (মনোজ বাজপেয়ীর চরিত্র)। দু’জনেই রাষ্ট্রের দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে নানা নৈতিক দ্বিধা–দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হন, এবং সত্য ও নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনে নিয়ম ভাঙতেও বাধ্য হন।
দু’টি প্রোজেক্টকে ঘিরে আলোচনা যত বাড়ছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে—দর্শক এমন গল্প চায় যাতে মিলেমিশে একাকার হবে আবেগ, বাস্তবতা, রাজনীতি আর থ্রিল।
থ্রিলার ঘরানায় ‘রক্তবীজ’-এর সাফল্য আলোড়ন তুলেছিল বাংলা সিনেমার জগতে। সেই ছবির আগুন ছড়াতে এই পুজোয় মুক্তি পেল নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘রক্তবীজ ২’। অ্যাকশন থ্রিলারে ভরপুর সিক্যুয়েলটিকে ঘিরে দর্শকের মধ্যে উন্মাদনা ইতিমধ্যেই তুঙ্গে। ছবি জুড়ে ভারত-বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ক, সন্ত্রাস দমনে দুই দেশের তৎপরতা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আগাগোড়া নজর কেড়েছে সকলের। প্রথম ছবির কাহিনি অনুসরণ করেই এগিয়েছিল এই ছবির গল্প। ‘রক্তবীজ’ ছবির গল্পে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকায় ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেছিল দর্শক। এবারও ছিল তাঁর দাপুটে, উজ্জ্বল উপস্থিতি। শেখ হাসিনার আদলে নির্মিত সুলতানা রহমান চরিত্রে সীমা বিশ্বাসও ছিলেন বরাবরের মতোই অনবদ্য। ছবি জুড়ে অপরাধী মুনির আলম অর্থাৎ অঙ্কুশকে খুঁজতে মরিয়া ছিল ‘পঙ্কজ সিংহ’ ওরফে আবির। ‘স্যার’-এর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তৎপর ‘সংযুক্তা’ মিমিও। তবে এবার দর্শকের বাড়তি পাওনা ছিল আবির-মিমিরের রোম্যান্স। খল হিসাবে আলাদা জায়গা করে নিয়েছিলেন অঙ্কুশও।
