হলিউডের দীর্ঘদিনের ‘অপ্রাপ্তি’ অবশেষে পূরণ হল। চার দশকের কেরিয়ারে অগণিতবিশ্বব্যাপী  ব্লকবাস্টার, প্রায় মৃত্যুকে ছুঁয়ে ফেলা বিপজ্জনক স্টান্ট করা আর তাঁর হাত ধরেই বার বার চাঙ্গা হয়ে ওঠে হলিউড। পৃথিবীর অন্যতম সেরা তারকা, চলচ্চিত্র শিল্পী টম ক্রুজ এবার চলচ্চিত্র দুনিয়ার সর্বোচ্চ সম্মানে সম্মানিত হলেন। ‘সাম্মানিক অস্কার’ পেলেন তিনি। 

আর সেই খবর বেরোতেই বলিউডে ছড়িয়ে পড়ল আনন্দ। বিশেষ করে অনিল কাপুর তো আপ্লুত। তাঁর সঙ্গে ক্রুজের বন্ধুত্ব থেকে এক ছবিতে কাজ- হলিউড ও বলিউডের দূরত্বকে কমিয়ে দিয়েছিল এক দশকেরও আগে। টম ক্রুজের জন্য অনিলের পোস্টে তাই বন্ধুত্ব, শ্রদ্ধা আর পৃথিবীজোড়া তারকার প্রতি নিখাদ ভালবাসা।   মঙ্গলবার ইনস্টাগ্রামে অনিল কাপুর দীর্ঘ নোটে লিখলেন, 

“অভিনন্দন, প্রিয় বন্ধু… এই সম্মান দুনিয়ার যে কোনও শিল্পীর জন্য সবচেয়ে গভীর স্বীকৃতি। তুমি যেভাবে সিনেমার  প্রতি নিজেকে উৎসর্গ করো, যে নিখুঁত শৃঙ্খলা, যে হৃদয় দিয়ে কাজ করো তা অনন্য।” অনিল আরও লেখেন, “তোমার এই অর্জন সেই সব শিল্পীর জন্যেও এক বার্তা, যারা প্রতিদিন নিজেদের সবটুকু দিয়ে সিনেমা তৈরি করেন। তোমার উজ্জ্বলতা, তোমার দয়া, তোমার বন্ধুত্ব সবই আজও আমার কাছে অমূল্য।”

 

 

 


অনিলের এই পোস্ট শুধু অভিনন্দন নয়, বরং ২০১১ সালের ‘মিশন: ইম্পসিবল– ঘোস্ট প্রটোকল’ ছবিতে দু’জনের সহযোগিতার স্মৃতিও জুড়ে দিয়েছে। সেখানেই টমের ইথান হান্টের সঙ্গে অনিলের বিলিয়নেয়ার ব্রিজ নাথের ঘটনাবহুল সিকোয়েন্স আজও ভক্তদের মনে রয়ে গেছে। অনিল বহুবার জানিয়েছেন, টম ক্রুজ তাঁর দেখা সবচেয়ে পেশাদার, বিনয়ী তারকাদের একজন।


অন্যদিকে, অস্কারের মঞ্চে টম সিনেমার কাছে তাঁর সারাজীবনের ঋণের কথা যেভাবে বললেন,তা শুনে মুগ্ধ গোটা দুনিয়া। অস্কার হাতে নিয়েও নিজের গুণগান করা তো দূর, বরং নিজের সাফল্যের কৃতিত্ব অন্যদেরই দিতে দেখা গেল তাঁকে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন দর্শকদের কাছে।
অস্কার হাতে তুলে নিয়ে টম ক্রুজ যেন নিজের জীবনকেই আবার একবার পর্দায় দেখালেন। বিশ্ব জুড়ে সবচেয়ে বেশি স্টান্ট নিজে করে দেখানো তারকার মধ্যে অন্যতম টম, কিন্তু এদিন পুরস্কার নিতে গিয়ে তিনি বললেন, “সিনেমা আমাকে তৈরি করেছে, মানুষ করেছে। আমাকে বিশ্ব দেখিয়েছে, আমাকে শিখিয়েছে ভিন্নতাকে সম্মান করতে আর মিলগুলোকে অনুভব করতে।” উঠে এসেছে তাঁর আবেগঘন স্মৃতি, “ছোটবেলায় অন্ধকার থিয়েটারে বসে প্রথমবার দেখেছিলাম প্রজেক্টরের আলো পর্দা ছুঁয়ে বিস্ফোরিত হতে আর সেই মুহূর্তেই ভাবলাম, সিনেমার ভেতরে যে দুনিয়া আছে, সেটাই আমার নিজের দুনিয়ার থেকেও বড়।” কথাশেষে বিনম্র সুরে টম বললেন, “ছবি তৈরি করা আমার পেশা নয়, আমিই ছবি।” এ যেন দর্শকদের মনের কথাই বললেন টম, তিনি সিনেমা বানান না, তিনি নিজেই সিনেমা। আর তাতেই হাততালিতে মুখরিত হয়ে উঠল গোটা বিশ্বজুড়ে থাকা সিনেমাপ্রেমীরা। 

টম ক্রুজের কেরিয়ার শুধু ব্লকবাস্টারের হিসেব দিয়ে মাপা যায় না, বরং বলা যায়  চার দশকে রূপকথার মতো তাঁর এই যাত্রা। 


‘টপ গান’ (১৯৮৬) দিয়ে তুমুল সাড়া ফেলেন বিশ্বব্যাপী। 


‘জেরি ম্যাকগুয়ের’, ‘রেইন ম্যান’, ‘আ ফিউ গুড মেন’-এই সব ছবির মাধ্যমে দর্শকের বিস্ময় আদায় করেন। 


‘মিশন: ইম্পসিবল’ ফ্র্যাঞ্চাইজির মাধ্যমে টম প্রমাণ করেন তিনি কেবল তারকা নন, বরং অ্যাকশন সিনেমার অ্যাড্রেনালিন-ইঞ্জিন

‘টপ গান: ম্যাভরিক’ প্রায় একাই বদলে দিয়েছিল করোনা পরবর্তী বিশ্বে থিয়েটারের অর্থনীতি


হলিউডে বলা হয়, “টম ক্রুজ শুধু সিনেমায় অভিনয় করেন না, সিনেমা নামক মাধ্যমটাকে তিনি চালনা করেন।”
 
উল্লেখ্য, ‘মিশন: ইম্পসিবল ঘোস্ট প্রোটোকল’-এর শুটিংয়ের সময়ে দু’জনের মধ্যেকার বন্ধুত্ব জমাটি হয়। দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাকশন শটে টম কীভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঝুলে ছিলেন, সে গল্প অনিল আজও বলেন। টম ক্রুজ সেই ছবির সেটে ভারতীয় টিমের প্রতি যেমন সম্মান দেখিয়েছিলেন, অনিলের মতে সেটাই ছিল তাঁর প্রকৃত মহত্ত্বের প্রমাণ। এই পুরস্কার পাওয়ার পরে বলিউড মহলেও অনেকে বলেছেন, টমের মতো কিংবদন্তিকে অনিল যেভাবে আন্তরিকভাবে সমর্থন করেছেন, তা সত্যিই বিরল।

টম ক্রুজের এই সম্মান শুধু হলিউডের জয় নয়, বিশ্ব সিনেমার এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আর সেই অধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে অনিল কাপুরের আবেগঘন শুভেচ্ছা যেন ভারতীয় সিনেমাকেও অংশীদার করে দিল এই সাফল্যের আলোয়। এই দুই তারকার বন্ধুত্ব, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রমাণ করে সিনেমা ভাষা আলাদা হলেও আবেগের রং এক।