আকাশ দেবনাথ: মানুষ হয়ে শুধু মানুষেরই কথা বলা, ঠিক যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু। বেশিও নয়, কমও নয়। ৩০ সেকেন্ডের রিলের দুনিয়ায় এমন ভাবনা থেকে ছবি বা সিরিজ নির্মাণের জন্য হিম্মত লাগে। সেই হিম্মতটা দেখিয়েছেন ‘গ্রাম চিকিৎসালয়’-এর নির্মাতারা। জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ ‘পঞ্চায়েত’ যাঁদের তৈরি, এই সিরিজটিও সেই ‘টিভিএফ’-এরই তৈরি। তাই প্রথম ঝলকে মনে হতে পারে দীপক কুমার মিশ্র নির্দেশিত এই সিরিজটিও বোধহয় একই পথে হাঁটবে। কিন্তু না, পর্ব যত এগোতে থাকে ততই দর্শককে চমকে দেয় ‘গ্রাম চিকিৎসালয়’।
প্রেক্ষাপট, এক আধমরা গ্রাম। এদেশের অধিকাংশ মানুষ যে ধরনের গ্রামে বাস করেন, তারই মতো। চালচুলোহীন, তাড়াহুড়োহীন… ডাক্তারহীন। সেখানেই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক হয়ে আসে প্রভাত সিনহা- অমল পরাশর। নিজের বাবার বিশাল হাসপাতাল ছেড়ে প্রভাতের এই অজ পাড়াগাঁয়ে আগমন শুধু মানুষের সেবা করার জন্যই। কিন্তু মুশকিল হল, এ গ্রামে কেউ তাঁর পরিষেবা নিতেই চায় না। একদিকে অশিক্ষার অন্ধকার, অন্যদিকে প্রভাতের আগে আসা শহুরে চিকিৎসকদের অন্তহীন অবহেলা- দ্বিমুখী ঘা খেতে খেতে এ গ্রামে কারও প্রত্যাশার শেষ বিন্দুটিও আর অবশিষ্ট নেই। সেই গ্রামে কি আদৌ মানানসই প্রভাতের মতো উজ্জ্বল ডাক্তার? একের পর এক পর্ব পার হয়ে যায় এই দ্বন্দ্বেই। শেষ পর্যন্ত একজনও রোগী চিকিৎসালয়ে আসে কি না তাই নিয়েই গল্প।
নিজের ভূমিকায় যথাযথ অমল পরাশর। সিরিয়াস চরিত্রে আগে খুব একটা দেখা যায়নি তাঁকে। এই সিরিজে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। যোগ্য সঙ্গত করেছেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুই কর্মী, যথাক্রমে ফুটানিজি এবং গোবিন্দর ভূমিকায় অভিনয় করা আনন্দেশ্বর দ্বিবেদী এবং আকাশ মাখিজা। অল্প সময়ে হাতুড়ে ডাক্তারের ভূমিকায় ঠিকঠাক অভিনয় করেছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা বিনয় পাঠকও। কিন্তু এই সিরিজের শো স্টপার নিঃসন্দেহে ইন্দু তথা নার্স দিদির ভূমিকায় অভিনয় করা গরিমা সিং। তিনি সৎ, পরিশ্রমী। স্বামী চলে গিয়েছেন তাঁকে ছেড়ে। অভাবের সংসারে একা হাতে সন্তানকে মানুষ করতে করতে নিঃশেষিত হয়ে যাওয়া ইন্দু যেন আসলে এই পোড়া দেশের মানবিক অবয়ব। যাঁর সব গেলেও তিনি গ্রামের সবার জন্য ভাবেন, শিশুদের জন্য সময় মতো টিকা নিয়ে যান। সবাইকে আগলে রাখেন। সন্তান স্নেহেও নৈতিকতা বিবর্জিত হয়ে পড়েন না। অথচ দিন শেষে চক্রাকারে তাঁরই কপালে এসে ধাক্কা দেয় আবহমান ট্র্যাজেডি। কাঁদতে কাঁদতে দ্বিধায় ভোগেন, ভাঙেন, কাঙাল হন, তবু ভোলেন না স্বর্গের পথ।
তিনিই তো আসল ভারতমাতা! মানসিক রোগে ধুঁকতে থাকা মিথ্যে মানুষের দেশে বিরল এক সুস্থিরমতি মা। কিন্তু তাঁর পাশে এসে দাঁড়ানোর মতো কোনও চিকিৎসক প্রভাত কি আদৌ অবশিষ্ট আছে এ দেশে? এই প্রশ্ন রেখেই শেষ হয় প্রথম সিজন। কিংবা শেষ হয়েও হয় না শেষ?
