প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে ব্লোয়ার দিয়ে শুকানো হচ্ছিল লোম। ভয়ে ছটফট করতে থাকে পার্সিয়ান বিড়াল। গ্রুমিংয়ের নামে ক্রমাগত চলতে থাকে পোষ্যর ওপর ‘অত্যাচার’। শেষ পর্যন্ত কাঁপতে কাঁপতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে বিড়াল। সম্প্রতি কলকাতার একটি পোষ্য পরিচর্যা কেন্দ্রের সেই ঘটনায় সরব হয়েছেন অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায়।
ঘটনাটি ঘটেছে যোধপুর পার্কের ‘পেট প্লাজা’ নামে একটি পোষ্য পরিচর্যা কেন্দ্রে। সদ্য মুম্বই থেকে এসে সেখানেই তিনটি পার্সিয়ান বিড়াল নিয়ে গিয়েছিলেন এক যুগল। দুটি বিড়ালের গ্রুমিং হলেও তৃতীয় বিড়ালের ক্ষেত্রে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।
ঠিক কী হয়েছিল? পার্লারের এক কর্মী ক্রমাগত বিড়ালটির দিকে ড্রায়ার দিতে থাকে। ভয়ে ছটফট করতে শুরু করে ওই পোষ্য। খাঁচার মধ্যেই চলছিল লোম শুকোনোর পুরো প্রক্রিয়া। অত্যন্ত ভয় পেয়ে খাঁচায় এদিক-ওদিক করতে থাকে বিড়াল। কিন্তু কোনও ভ্রূক্ষেপ ছিল না ওই যুবকের। ছটফট করতে করতেই একটা সময় পর বিড়ালটি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তবে এতেও বিন্দুমাত্র হোলদোল হয়নি যুবকের। এরপর রীতিমতো বিড়ালের ঘাড় ধরে নীচে নামিয়ে আনে সে। দিন কয়েক আগে এই ঘটনার ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে সমাজ মাধ্যমে।
অনেকেই ঘটনাটিতে ওই যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। এমনকী তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ারও দাবি উঠেছে। কিন্তু সত্যি কি ওই যুবকেরও দোষ? প্রশ্ন তুলেছেন তথাগত। তিনি বলেন, “অর্থের প্রয়োজনে ওই যুবক পোষ্য পরিচর্যার কাজ করছিলেন। তাই কুকুর-বিড়ালদের পরিচর্যায় প্রশিক্ষিত না হয়েও তাঁকে নিযুক্ত করা হয়। অনেক সেক্টরে এই চিত্র দেখা যায় যে প্রশিক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র অর্থের প্রয়োজন অনেকে অনেক কাজ করেন। এই যুবকের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে।”
তাহলে দায় কার? প্রশ্ন তুলেছেন অভিনেতা। তাঁর কথায়, “এই দায় ওই দোকানের অর্থাৎ ‘পেট প্লাজা’র। কারণ সেখানে অনভিজ্ঞ ও অপটু কর্মচারী নিয়োগই ভয়ঙ্কর অপরাধ। প্রাণ বিপজ্জনক এমন পরিচর্যা কেন্দ্রে পোষ্যদের তুলে দেওয়া হচ্ছে।”
তথাগত জানিয়েছেন, বর্তমানে শহর কলকাতায় পোষ্যর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এই ধরনের পার্লারও। ইদানীং সেখানে পোষ্যদের চিকিৎসকেরাও বসেন। অর্থাৎ একই ছাদের তলায় পরিচর্যা, চিকিৎসা থেকে শুরু করে খেলনা-খাবারের সামগ্রী সবই পাওয়া যাচ্ছে। এককথায় পুরো একটা ব্যবসার প্যাকেজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথাগত বলেন, “পরিচর্যার নামে মুড়িমুড়কির মতো বিভিন্ন জায়গায় পোষ্যদের নিয়ে ব্যবসার জন্য পার্লার গড়ে উঠছে এবং সেখানে যাদের কুকুর-বিড়ালদের নিয়ে কোনও ধারণা নেই তাঁদের নূন্যতম বেতনে কাজ করানো হচ্ছে! তাই শুধু ওই যুবকের নয়, যখন বিড়ালটি ছটফট করছিল তখন পার্লারে উপস্থিত অন্য কর্মীরাও এগিয়ে আসেনি।তাই তাঁরাও একইভাবে দোষী।”
এমন মর্মান্তিক ঘটনায় পশুপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। পোষ্যর পরিচর্যায় বিষয়ে সবসময়ে খোঁজখবর নিয়ে পার্লারে নিয়ে যাওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তথাগত।
