বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর বিভিন্ন রাজ্যে অত্যাচারের অভিযোগ উঠছে। বাংলা ভাষায় কথা বলায় তাঁদের বাংলাদেশি সন্দেহে অত্যাচার করা হচ্ছে। গত কয়েক মাসে এমন অভিযোগ বারে বারে উঠেছে। সম্প্রতি, বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে চিঠি লেখায় বিরাট বিতর্কের মুখে দিল্লি পুলিশ। বঙ্গভবনে পাঠানো একটি চিঠিতে বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি ভাষা বলে উল্লেখ করেছে তারা। এ প্রসঙ্গে অননুকরণীয় ছন্দে কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী। লেখেন, “বাংলা বিরোধী বাঙালি বিরোধী গান্ধীজি বিরোধী সংবিধান বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন বিরোধী একই সঙ্গে সেলুলার জেলে বসে মুচলেকার পক্ষে হিটলারের পক্ষে ডোলান্ড ট্রাম্পের পক্ষে নাথুরামের পক্ষে এমন কী গুমনামী বাবার পক্ষে এক কথায় প্রকাশ করুন-”

 

 

সেই পোস্টের বার্তা বাক্সে রসিক নেটিজেনদের পাশাপাশি এসে হাজির হয় অতি দেশপ্রেমী ট্রোলাররা।  ঋত্বিকের এই পোস্টের মন্তব্যে এসে ট্রোল করে তারা। অভিনেতা। সেখানেই অভিনেতার উদ্দেশ্যে একজন লেখেন, “তোর বাপ”।  স্বভাবতই এহেন অসম্মানজনক কমেন্ট দেখে চুপ করে থাকেননি ঋত্বিক। সেই ট্রোলের জবাবও দিয়েছেন।পাল্টা সেই ব্যক্তিকে তিনি শ্লেষ মিশ্রিত সুচারু ভাষাতেই জবাব দেন, “আপনার ভাষা ও রুচির কদর্যতা আপনার পারিবারিক অর্জন হবে হয়তো। আপনার অসভ্যতার ওপর একটু আলো পড়ুক। তাই কমেন্ট করে রাখলাম।” ( পোস্টের বানান বানান অপরিবর্তিত রাখা হল) 

 

এখানেই থামেননি ঋত্বিক। রাজকুমার দাশগুপ্ত নামের সেই ট্রোলারের ইনবক্সে গিয়ে তাঁকে মেসেজ করেন ‘মৃগয়া’ নায়ক – “আপনাকে একটু বিখ্যাত করে ছাড়বো মাশাই। খুব ভালো থাকবেন।” ( কমেন্টের বানান বানান অপরিবর্তিত রাখা হল) এরপর এদিন নিজের কথা রাখলেন ঋত্বিক। সেই ট্রোলারকে সমাজমাধ্যমে ‘বিখ্যাত’ করে দেওয়ার কথা রাখার ব্যাপারে যে তিনি কোমর বেঁধেই নেমেছেন, তা বুধবার ফেসবুকে করা ঋত্বিকের পোস্ট থেকেই পরিষ্কার। 


ওই ট্রোলারের করা ‘অশ্লীল’ কমেন্ট এবং তাঁর ইনবক্সে গিয়ে নিজের করে আসা দু'টো মেসেজের স্ক্রিনশটের ছবি পোস্ট করলেন আসা যাওয়ার মাঝে' ছবির নায়ক। সঙ্গে লিখলেন কটাক্ষ ও শ্লেষমাখানো একটি ঈষৎ লম্বা পোস্ট -

“অনেকেই ফেসবুকে কমেন্ট করার সময় ভুলে যায় পাবলিক প্লেসে আসলে সে কী বলছে। নিজের বাড়ি পরিবার প্রতিবেশী আত্মীয় দের কাছে তার যে ইমেজ সেটাও ভুলে যায়। এরা আমার সাবজেক্ট। আমি মানুষ দেখি ছোটবেলা থেকে..মন দিয়ে দেখি। আজ একজন কে পেলাম। লোকটা তার রুচি Decency র পরিচয় দিয়েছিল নিজের কমেন্টে। আমার মনে হল ওনার ওপর একটু প্রচারের আলো পড়ুক, ওনাকে সেটা জানিয়ে কমেন্ট করলাম। তাতে উনি বললেন আমি নাকি রোজ দেশ কে অপমান করি। যেন দেশ ওনার বাড়ির বৈঠকখানা... তখন তাকে একটা কমোড কিনে টুপির মতো করে ব্যাবহার করার পরামর্শ দিতেই উনি কমেন্ট ডিলিট করে ঝাঁপ ফেলে ভাগলবা!! আমি জানতাম ওনার বেলুনের মতো শিরদাঁড়া একটু পরেই অন্য চেহারা নেবে, এসব চিজ রোজ ফেসবুকে দেখি লোকটার আইডিয়া নেই।যাইহোক তারপর উনি মেসেঞ্জারে ও কর্পূরের ছদ্মবেশ নিলেন!
তবে আমি আমার কথা রাখবো।  কিছু স্ক্রিনশট রইল ওনাকে বিখ্যাত করার আকাঙ্খায়” 

 

 

 

ঋত্বিকের কাণ্ড দেখে মজায় মেতে ওঠার পাশাপাশি তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছে নেটপাড়া। এই পোস্ট ‘লাইক’ করে সমর্থন জানিয়েছেন অনেকেই। অভিনেতার উদ্দেশ্যে এক রসিক নেটিজেনের বক্তব্য, “মাশাই? উনি কি মাশাইমারার লোক? প্রশ্নের জবাবে ঋত্বিক বলে ওঠেন, “উনি তো মশা মাছি গোত্রীয়, তাই "মশাই" বললে যদি ভুল মানে করেন তাই একটু ক্রিয়েটিভ হওয়ার চেষ্টা করছিলাম।”

 


প্রসঙ্গত, ‘মৃগয়া’ ছবিতে ঋত্বিক চক্রবর্তীর অ্যাকশন দেখে মুগ্ধ দর্শকদের একাংশ। কেউ ঋত্বিকের অ্যাকশন দেখে বলছেন রজনীকান্তের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আবার কারও বক্তব্য, হৃতিক রোশন যখন অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করেন, তখন দেখলে যে উন্মাদনা হয়, ঋত্বিক চক্রবর্তীকে বড়পর্দায় দেখেও সেই পর্যায়ের উত্তেজনা হচ্ছে। পর্দাতেই শুধু অ্যাকশন নয়, সমাজমাধ্যমেও যে স্রেফ কথা এবং রসবোধের এবং অবশ্যই বুকের পাটার উপর ভর করে  ধুন্ধুমার অ্যাকশন করা যায়, তা ফের একবার দেখালেন ঋত্বিক!কিন্তু এখানে স্পষ্ট—স্রেফ ঘুষি নয়, ভাষাই তাঁর অস্ত্র!