আজকাল ওয়েবডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ এক আইনি লড়াইয়ে বড় ধাক্কা খেল টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS)। কম্পিউটার সায়েন্সেস কর্পোরেশন (CSC)–এর সঙ্গে বহু বছর ধরে চলা বাণিজ্যিক গোপনীয়তা–সংক্রান্ত মামলায় মার্কিন ফিফথ সার্কিট কোর্ট অব অ্যাপিলস জেলা আদালতের দেওয়া ১৯৪ মিলিয়ন ডলারের জরিমানা বহাল রেখেছে। এই মামলা ২০১৯ সাল থেকে দুই কোম্পানির মধ্যে গুরুতর বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।
TCS–এর ২১ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখের কর্পোরেট প্রকাশনায় জানানো হয়েছে যে আপিল কোর্ট জেলা আদালতের আর্থিক ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত রায় পুরোপুরি বহাল রেখেছে। তবে কোম্পানির জন্য আংশিক স্বস্তির খবর—আগে দেওয়া ইনজাংশন বা কার্যনিষেধাজ্ঞা আদালত বাতিল করেছে। এখন বিষয়টি ফের পাঠানো হয়েছে টেক্সাসের নর্দান ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের ডালাস ডিভিশনে, যেখানে আপিল কোর্টের নির্দেশ মেনে ওই ইনজাংশন পুনর্বিচার করা হবে।
এই রায় আসে ১৪ জুন, ২০২৪–এ শেয়ারবাজারকে জানানো TCS–এর আগের আপডেটের পর। তখন কোম্পানি জানিয়েছিল যে জেলা আদালত তাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে মোট ১৯৪.২ মিলিয়ন ডলার জরিমানা ধার্য করেছে।
সর্বশেষ রায়ের পর TCS জানিয়েছে, তারা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করছে এবং সব সম্ভাব্য আইনি বিকল্প খতিয়ে দেখবে। এর মধ্যে রয়েছে উপযুক্ত আদালতে পুনর্বিবেচনার আবেদন, পুনরায় আপিল করা কিংবা অন্যান্য আইনগত প্রক্রিয়া। কোম্পানির বিবৃতিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে তারা তাদের অবস্থান “জোরালোভাবে রক্ষা করবে”।
এই মামলার শিকড় ২০১৯ সালে, যখন CSC অভিযোগ করেছিল যে TCS তাদের বাণিজ্যিক গোপন তথ্য বা ট্রেড সিক্রেট বেআইনিভাবে ব্যবহার করেছে। CSC–র দাবি ছিল, ট্রান্সআমেরিকা থেকে TCS–এ যোগ দেওয়া কয়েকজন কর্মী তাদের সফটওয়্যারের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যবহারকারী ছিলেন।
TCS–এ যোগ দেওয়ার পর সেই সফটওয়্যার সম্পর্কিত জ্ঞান ও অ্যাকসেস ব্যবহার করে TCS নাকি একটি প্রতিযোগিতামূলক বিমা–প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে। এই অভিযোগ আরও তীব্র হয় যখন ২ বিলিয়ন ডলারের বড়সড় ডিলের মাধ্যমে TCS ট্রান্সআমেরিকার প্রযুক্তিগত পরিষেবা নেওয়ার দায়িত্ব নেয়।
CSC–র দাবি, এই অ্যাকসেস TCS–কে অন্যায্য সুবিধা দেয় এবং তাদের নিজস্ব সফটওয়্যার ব্যবসায় ক্ষতি করে। TCS অবশ্য ধারাবাহিকভাবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে যে তাদের তৈরি প্ল্যাটফর্ম সম্পূর্ণ স্বাধীন উন্নয়ন এবং কোনওরূপ গোপন তথ্যের অপব্যবহার করা হয়নি।
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জরিমানা TCS–এর আর্থিক স্থিতিশীলতাকে বড় কোনো ঝুঁকিতে ফেলবে না, কারণ কোম্পানির নগদ মজুত এবং ব্যালান্স শিট যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে আইনি অনিশ্চয়তা এবং সম্ভাব্য অতিরিক্ত খরচ কোম্পানির ভবিষ্যৎ কৌশলে চাপ তৈরি করতে পারে।
সামগ্রিকভাবে, আপিল কোর্টের এই রায় TCS–এর জন্য বড়সড় ধাক্কা হলেও—ইনজাংশন বাতিল হওয়ায় আংশিক স্বস্তি মিলেছে। এখন নজর থাকবে ডালাস আদালতে মামলার পরবর্তী শুনানির দিকে এবং TCS কোন আইনি পথ বেছে নেয় তার ওপর।
