আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের শহুরে এলাকায় বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স নেওয়া হয়ে থাকে। Welfin.in-এর ডাইরেক্টর তথা আর্থিক বিশেষজ্ঞ তাপস চক্রবর্তী লিঙ্কডইনে লিখেছেন, "বেঙ্গালুরু: ২৫,০০০ টাকা ভাড়া মানে প্রায় ১.৫-২.৫ লক্ষ টাকা অ্যাডভান্স দিতে হবে। সমপরিমাণ ভা়ার ক্ষেত্রে চেন্নাইয়ে ৫-৬ মাসের জমা (প্রায় ১.২৫-১.৫ লক্ষ টাকা)। মুম্বই: ২-৩ মাসের আগাম জমা (প্রায় ৫০ হাজার-৭৫ হাজার টাকা)। দিল্লির ক্ষেত্রে ১-২ মাসের জমা প্রায় ২৫ হাজার-৫০ হাজার টাকা।"

শহর ও অঞ্চলভেদে অ্যাডভান্সের অর্থের পরিবর্তন ঘটে। অ্যাডভান্স জমা মানে সেই টাকা কার্যত নিষ্ক্রিয় করে ফেলা। অর্থাৎ, ওই টাকার উপর চক্রবৃদ্ধি, রিটার্ন অর্জন কিছুই সম্ভব নয়।

* শহুরে ভারতের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বাড়ি ভাড়া দেয়
ভাড়া দেওয়া সাধারণ শোনালেও, ভারতের মাত্র ২৮ শতাংশ মানুষ শহরাঞ্চলে ভাড়া বাড়িতে বাস করেন বলে দাবি করেছেন  আর্থিক বিশেষজ্ঞ তাপস চক্রবর্তী। এখনও ২৭.৩৭ মিলিয়ন পরিবার, বেশিরভাগই মেট্রো শহরে ফ্ল্যাটে বাস করে, যা আজকের অনেক তরুণ কর্মজীবী ​​পরিবারের পছন্দের সঙ্গে খুব মিল। তাদের জন্য, আমানতের পরিমাণ প্রায়শই তারা কোথায় থাকে এবং তারা কতটা সঞ্চয় করতে পারে তা নির্ধারণ করে।

* নতুন ভাড়া বিধি কেন গুরুত্বপূর্ণ
ভাড়া বিধি ২০২৫ একটি স্পষ্ট সীমা নির্ধারণ করেছে: আবাসিক সম্পত্তির জন্য সর্বোচ্চ দুই মাসের আমানত এবং বাণিজ্যিক স্থানের জন্য ছয় মাসের সীমা। এই পরিবর্তন ভাড়াটেদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় স্বস্তি এনেছে। 

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে, ভাড়া বাড়ির অ্যাডভান্সের মতো ব্লক করা তহবিলের সামান্য হ্রাসও ভাড়াটেদের এসআইপি-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকতে, অপ্রত্যাশিত ব্যয় পরিচালনা করতে বা আরও সঞ্চয় নাগালের মধ্যে রাখতে সহায়তা করতে পারে।

* স্পষ্ট নিয়ম মানে স্পষ্ট অর্থায়ন
উচ্চ আমানত কেবল তারল্যের উপর প্রভাব ফেলেনি। অনেক ক্ষেত্রে, হাতে লেখা বা অনানুষ্ঠানিক ভাড়া চুক্তি ভাড়াটেদের আইনি জটিলতার মুখোমুখি হতে বাধ্য করেছে। নতুন নিয়মে, নথিপত্র আরও স্পষ্টভাবে এবং পুরো ভাড়া প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ করতে বিধি রয়েছে।

তাপস চক্রবর্তী র কথায়, পরিবর্তনটি দীর্ঘদিন ধরেই প্রত্যাশিত। তিনি বলেন, "নতুন ভাড়া নিয়ম ২০২৫ কেবল কাগজপত্রই ঠিক করে না। ভাড়াটেদের দীর্ঘস্থায়ী সম্পদের অপচয় রোধ করে।" 

বছরের পর বছর ধরে, ভাড়ার ধরণগুলি মানুষ কীভাবে বাস করত তা নির্ধারণ করেছিল - তারা অফিস থেকে কত দূরে থাকত, তারা কী সামর্থ্য রাখতে পারত এবং তাদের বিনিয়োগ করার জন্য যথেষ্ট অবশিষ্ট ছিল কিনা ইত্যাদি দেখা হত। নয়া নিয়মে ভাড়াটেরা অবশেষে একটি ন্যায্য ব্যবস্থা পেতে পারে যা তাদের বাড়ি এবং তাদের আর্থিক অবস্থা- উভয়কেই সুরক্ষিত করে।

নয়া ভাড়া নীতিতে কী কী বদল?

১ ডিজিটালি স্ট্যাম্পড এবং অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক
সবচেয়ে বড় বদলটি হল, এ বার থেকে সমস্ত ভাড়াচুক্তিই ডিজিটালি স্ট্যাম্পড এবং অনলাইনে রেজিস্টার করা বাধ্যতামূলক করা হল। এতদিন বহু রাজ্যেই হাতে লেখা চুক্তি বা সাধারণ স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তিপত্রই চলত। অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন হত না। নতুন নিয়মে ভাড়ার প্রক্রিয়াকে সরকারিভাবে রেজিস্টার্ড করতেই হবে। চুক্তি রেজিস্টার না করালে রাজ্যভেদে মিনিমাম পাঁচ হাজার টাকা জরিমানাও হতে পারে।

২ সিকিউরিটি মানির নিয়ম
কলকাতা, মুম্বই, ব্যাঙ্গালুরু, নয়ডার মতো এলাকায় বা শহরতলিতে আজকাল একটু ভাল লোকেশন হলেই প্রচুর অগ্রিম সিকিউরিটি মানি চাওয়া হয়। চাকরিজীবীদের পক্ষে এত বেশি টাকা দেওয়া এক কথায় অসম্ভব। সেই দিকটি মাথায় রেখেও নতুন নিয়ম আনা হয়েছে। নতুন নিয়মে, এবার থেকে আর বাড়িওয়ালারা ২ মাসের ভাড়ার বেশি অঙ্কের টাকা 'সিকিউরিটি মানি' হিসাবে নিতে পারবেন না। অর্থাৎ, কোনও ফ্ল্যাটের মাসে ১০ হাজার টাকা ভাড়া হলে, সর্বোচ্চ ২০,০০০ টাকা সিকিউরিটি ডিপোজিট নেওয়া যাবে। তবে বাণিজ্যিক জায়গার ক্ষেত্রে সেই সীমা ছয়’মাস। অর্থাৎ দোকানঘর, অফিস ইত্যাদি ভাড়া দিলে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছয় মাসের ভাড়া সিকিউরিটি ডিপোজিট নেওয়া যাবে।

৩ ভাড়া বাড়ানোর নিয়ম
বছরে একবারই ভাড়া বাড়ানো যাবে। তবে তারও অন্তত ৯০ দিন আগে ভাড়াটেকে লিখিত নোটিস ধরাতে হবে বাড়িওয়ালাকে। হঠাৎ ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা রুখতেই এই নির্দেশ।

৪ ভাড়াটিয়াদের সুরক্ষায় নজর
নতুন নিয়মে ভাড়াটিয়ার আইনি সুরক্ষা আরও সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। রেন্ট ট্রাইবুনালের উচ্ছেদ নির্দেশ ছাড়া কাউকে জোর করে বাড়ি খালি করানো যাবে না। পাশাপাশি বাড়িওয়ালা যদি ভাড়া দেওয়ার পর হঠাৎ বাড়িতে ঢুকতে চান, তবে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে লিখিতভাবে জানাতে হবে। ভাড়াটের প্রাইভেসি রক্ষার জন্যই এই নিয়ম।

৫ ভাড়াটেকেও পুলিশ ভেরিফিকেশন করাতে হবে
ভাড়াটেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন করাতে হবে। সঠিক নথিপত্র এবং ভাড়াবাড়ির অপব্যবহার এড়াতেই এই নির্দেশ। জোর করে উচ্ছেদ, ভয় দেখানো, তালা বদল, বিদ্যুৎ বা জল কেটে দেওয়া, এসব করলে আর রক্ষে নেই। আইনের চোখে রীতিমতো শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে এগুলি ধরা হবে। ভাড়াটে গিয়ে থানায় অভিযোগ জানালে রীতিমতো আইনি জটে পড়তে হবে বাড়িওয়ালাকে।

৬ জরুরি মেরামত
কোনও জরুরি মেরামতের প্রয়োজন হলে এবং বাড়িওয়ালা ৩০ দিনের মধ্যে তা না করলে, ভাড়াটে নিজের খরচেই সেই মেরামত করিয়ে নিতে পারেন। তারপর সেই বিল ধরাতে পারেন বাড়িওয়ালাকে। এরপর বাড়িওয়ালাকে সেই খরচ ভাড়ার অঙ্ক থেকে বাদ দিতে হবে।