আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতীয় চাল রপ্তানিকারকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান রাইস এক্সপোর্টার্স ফেডারেশন (IREF) জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন যদি ভারতীয় চাল আমদানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে, তার আসল বোঝা শেষ পর্যন্ত মার্কিন ভোক্তাদের ওপরই পড়বে। কারণ, আমেরিকার বহু পরিবার নিয়মিত খাদ্য হিসেবে ভারতীয় চাল—বিশেষ করে বাসমতী—ব্যবহার করে, যা সহজে বিকল্প দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যায় না।


ফেডারেশনের মতে, বাস্তবে এই শুল্কের চাপ ইতিমধ্যেই অনেকটাই মার্কিন ভোক্তাদের ওপর স্থানান্তরিত হয়েছে। খুচরো বাজারের দামের তথ্য থেকেই তা স্পষ্ট। এই পরিস্থিতিতে ভারত চাল রপ্তানির জন্য আরও নতুন বাজার খোঁজার পাশাপাশি অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও গভীর করবে বলেও জানিয়েছে IREF।


সংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হলেও ভারতের চাল রপ্তানি বিশ্বজুড়ে বহুমুখীভাবে বিস্তৃত। ভারত সরকার ও ফেডারেশনের ঘনিষ্ট সমন্বয়ে বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী করছি এবং ভারতীয় চালের জন্য নতুন বাজার খুলছি।”


গত সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে ইঙ্গিত দেন যে ভারতীয় চালের ওপর নতুন করে শুল্ক চাপানো হতে পারে। ওই বৈঠকে ট্রাম্প কৃষিপণ্য আমদানির ওপর নতুন শুল্ক আরোপের আগ্রহ প্রকাশ করেন, যার মধ্যে ভারতীয় চাল ও কানাডা থেকে আমদানি হওয়া সারও রয়েছে।


তবে বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই শুল্কের হুমকি মূলত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বার্তার অংশ, বড় কোনও নীতিগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত নয়। একই বৈঠকে ট্রাম্প মার্কিন কৃষকদের জন্য ১২ বিলিয়ন ডলারের নতুন আর্থিক সহায়তার ঘোষণাও করেন। তাঁর দাবি, সস্তা আমদানির কারণে মার্কিন কৃষকরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন।


গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI) জানিয়েছে, নতুন শুল্ক আরোপ হলেও ভারতীয় চাল রপ্তানিকারকদের ওপর তার প্রভাব সীমিত হবে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলে চালের চাহিদা অত্যন্ত শক্তিশালী, যা ভারতের সামনে একাধিক রপ্তানি বিকল্প খুলে রাখে। তবে শুল্ক বাড়লে মার্কিন বাজারে ভারতীয় চালের দাম আরও বাড়বে, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে সেখানকার ভোক্তাদের ওপর।


IREF-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৭৪,২১৩.১৪ মেট্রিক টন বাসমতী চাল রপ্তানি করেছে, যার মোট মূল্য ছিল ৩৩৭.১০ মিলিয়ন ডলার। এই হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় বাসমতী চালের চতুর্থ বৃহত্তম বাজার।


ফেডারেশন আরও জানিয়েছে, ভারতীয় চালের বড় অংশ উপসাগরীয় দেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের দ্বারা কেনা ও ভোগ করা হয়। বিরিয়ানি-সহ বিভিন্ন জনপ্রিয় খাদ্যে বাসমতী চাল অপরিহার্য, এবং তার চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। ভারতীয় বাসমতী চালের বিশেষ সুগন্ধ, স্বাদ, দানার লম্বা হওয়ার বৈশিষ্ট্য ও টেক্সচারের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত চাল দিয়ে এটি বদলানো সম্ভব নয়।


বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক শুল্ক বৃদ্ধির আগেই ভারতীয় চালের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক ছিল। গত আগস্টে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর তা কার্যত আরও ৪০ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এত বড় শুল্ক সত্ত্বেও রপ্তানিতে বড় ধাক্কা লাগেনি। কারণ, বাড়তি খরচ খুচরো দামের মাধ্যমে মার্কিন ভোক্তাদের কাছ থেকেই আদায় হয়েছে, আর ভারতের কৃষক ও রপ্তানিকারকরা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল আয় ধরে রাখতে পেরেছেন।


GTRI পরামর্শ দিয়েছে, এই শুল্ক সমস্যা নির্বাচনের মরসুমের রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবেই দেখা উচিত এবং এমন কোনও ছাড় না দেওয়া দরকার, যা ভারতের বাণিজ্যিক অবস্থানকে দুর্বল করতে পারে। সংস্থার মতে, এই ধরনের শুল্কমূলক সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত ভারতীয় রপ্তানিকারকদের চেয়ে মার্কিন ভোক্তাদেরই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে।