আজকাল ওয়েবডেস্ক: সপ্তম বেতন কমিশনের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫-এ শেষ হচ্ছে। সরকার এখনও বেতন সংশোধন বা বকেয়া গণনা সম্পর্কে কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না করলেও ইংরেজি নয়া বছরের প্রথম দিন থেকেই কার্যকর হতে পারে অষ্টম বেতন কমিশন। ফলে আসার আলো দেখছেন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীরা।
পূর্ববর্তী বেতন কমিশনের প্রবণতা অনুসারে, প্রকৃত বেতন পরিশোধ পরে হলেও, বকেয়া সাধারণত পূর্ববর্তী কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের দিন থেকেই শুরু হয়।
অষ্টম বেতন কমিশন কবে বাস্তবায়িত হবে?
নভেম্বর ২০২৫-এ অর্থ মন্ত্রক অষ্টম বেতন কমিশনকে তার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ১৮ মাস সময় দিয়েছে। এর মানে হল, সুপারিশগুলো সম্ভবত ২০২৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রস্তুত হবে।
কর্মা ম্যানেজমেন্ট গ্লোবাল কনসাল্টিং সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং চিফ ভিশন অফিসার প্রতীক বৈদ্য ব্যাখ্যা করেছেন যে, অষ্টম বেতন কমিশন কার্যকরের হলেও, বর্ধিত বেতন কর্মচারীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছানোর প্রকৃত সময়ের মধ্যে বিলম্ব হবে, ফলে এর জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত।
প্রতীক বৈদ্য বলেন, "কাগজে-কলমে, অষ্টম বেতন কমিশনকে ১ জানুয়ারি (২০২৬) থেকে কার্যকর বেতন সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাস্তবে, পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে ‘কার্যকর তারিখ’ এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রথম বর্ধিত বেতন জমা হওয়ার মধ্যে সাধারণত একটি ব্যবধান থাকে।"
তিনি উল্লেখ করেন যে সপ্তম বেতন কমিশনের সময়, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে বেতন সংশোধন করা হয়েছিল, কিন্তু মন্ত্রিসভার অনুমোদন আসে সেই বছরের জুন মাসে এবং বকেয়া পরবর্তী মাসগুলোতে পরিশোধ করা হয়েছিল।
বৈদ্য আরও বলেন, “বাস্তবে, কর্মচারীদের ২০২৬-২৭ অর্থবছরের কোনও এক সময়ে প্রকৃত অর্থ বিতরণের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত, এবং বকেয়া (যদি থাকে) বিজ্ঞাপিত কার্যকর তারিখ থেকে জমা হবে।”
অষ্টম বেতন কমিশনের অধীনে বেতন বৃদ্ধির পরিমাণ কতটা প্রত্যাশিত?
এখনও কোনও সরকারি সংখ্যা ঘোষণা করা হয়নি, তবে পূর্ববর্তী বেতন কমিশন এবং বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেখে একটি অনুমান করা যেতে পারে।
ষষ্ঠ বেতন কমিশনের ফলে গড় বেতন প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। সপ্তম বেতন কমিশনে তুলনামূলকভাবে কম বৃদ্ধি হয়েছিল, মাত্র ২৩-২৫ শতাংশ অনুমান করা হয়েছিল, যেখানে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ছিল ২.৫৭। অষ্টম বেতন কমিশনের জন্য প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, বেতন বৃদ্ধির হার ২০-৩৫ শতাংশ হতে পারে। ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৪ থেকে ৩.০-এর মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বিশেষ করে প্রাথমিক স্তরে মূল বেতন বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। তবে, এই সংখ্যাগুলো কেবল প্রত্যাশা, কোনও নিশ্চয়তা নয়।
চূড়ান্ত বৃদ্ধি কীসের উপর নির্ভর করবে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতা, সরকারি অর্থব্যবস্থা এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি-সহ বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করবে।
প্রতীক বৈদ্য বিশ্বাস করেন যে, সরকার একটি ভারসাম্যপূর্ণ পন্থা অবলম্বন করবে। তিনি বলেন, "চূড়ান্ত সংখ্যাটি আগামী ১২-১৮ মাসের মুদ্রাস্ফীতি, ১৬তম অর্থ কমিশনের পরের আর্থিক সংস্থান, কর আদায়ের হার এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপর নির্ভর করবে। আমার ধারণা, সরকার একটি নজরকাড়া ও সন্তোষজনক বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে ভাতা এবং মহার্ঘ ভাতার সমন্বয়ের একটি সুচিন্তিত কাঠামোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করবে।"
কর্মচারীদের কী মনে রাখা উচিত?
যদিও কাগজে-কলমে ১ জানুয়ারি, ২০২৬-কে অষ্টম বেতন কমিশনের কার্যকর তারিখ হিসেবে ধরা হয়, তবে প্রকৃত বেতন সংশোধন এবং বকেয়া পেতে সময় লাগতে পারে। আগের বেতন কমিশনগুলোর মতো এবারও কর্মচারীদের একটি অপেক্ষার সময়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
আপাতত, একটি মাঝারি কিন্তু অর্থবহ বেতন বৃদ্ধির প্রত্যাশা যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হচ্ছে, এবং অষ্টম বেতন কমিশন তার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর ও সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
