আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিজেপি শাসিত ডবল ইঞ্জিন সরকারের উত্তরপ্রদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে এসে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার আধিকারিকদের হাতে  গ্রেপ্তার হল সেখানকার কুখ্যাত বাদাউন গ্যাঙের তিনজন মহিলা সদস্য-সহ মোট  ছ'জন দুষ্কৃতী। 
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত ছয় দুষ্কৃতীর নাম- সুনীল, বিজয় সিং, শ্যামসুন্দর, সোনি, প্রিয়াঙ্কা এবং রুবি। ধৃতদের বয়স ২৩-৩৮ বছরের মধ্যে। ধৃত ছয় দুষ্কৃতীর মধ্যে তিন দুষ্কৃতীর বাড়ি উত্তরপ্রদেশের বাদাউন জেলার বিভিন্ন গ্রামে।  তিন মহিলা দুষ্কৃতীর বাড়ি উত্তরপ্রদেশের এটাওয়া এবং জালাউর জেলায়। 

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক অপরাধমূলক কাজের জন্য খবরের শিরোনামে এসেছে উত্তরপ্রদেশের বাদাউন গ্যাঙ। পুলিশ সূত্রের খবর, এই দুষ্কৃতী দলের  সদস্যরা মূলত বিভিন্ন দেশি হাতিয়ার ব্যবহার করে বড় বড় সোনার দোকান বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে লুটতরাজ বা ডাকাতি করার জন্য দেশে কুখ্যাত হয়ে উঠেছে। 

জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার অমিত কুমার সাউ বলেন, "নভেম্বর মাসের ২৯ তারিখে মুর্শিদাবাদের সুতি থানার মদনার মোড়ে একটি সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই দোকান থেকে নগদ প্রায় এক লক্ষ টাকা-সহ বেশ কিছু সোনা এবং রুপোর গয়না খোওয়া যায়।" তদন্ত করতে নেমে পুলিশ জানতে পারে রাতের অন্ধকারে ৭-৮ জন দুষ্কৃতী ওই দোকানের কাছে যখন জড়ো হয়েছিল সেই সময় স্থানীয় এক নাইট গার্ড তাদের বাধা দেয়। কিন্তু তাকে বেঁধে রেখে ছেনি হাতুড়ি এবং অন্যান্য জিনিস ব্যবহার করে দুষ্কৃতী দল সোনার দোকানের শাটার ভেঙে ভিতরে ঢোকে এবং সেখান থেকে বিভিন্ন জিনিস চুরি করে এলাকা থেকে চম্পট দেয়। 
 
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, দুষ্কৃতীরা স্থানীয় না হওয়ায় এই চুরির ঘটনার সমাধান করতে তাদের প্রথমে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। এরপর বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ এবং টেকনিক্যাল সাহায্য ব্যবহার করে পুলিশ জানতে পারে  ভয়াবহ এই ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলার কোনও দুষ্কৃতী দল জড়িত নয়।  উত্তরপ্রদেশ থেকে ৭-৮  জন কুখ্যাত দুষ্কৃতী এসে মুর্শিদাবাদে এই ডাকাতি করে পালিয়ে গিয়েছে। 
 
পুলিশ সুপার বলেন, "এই তথ্য পাওয়ার পর জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার ক্রাইম মনিটরিং সেল এবং বিভিন্ন থানার আধিকারিকদের নিয়ে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়।   এরপর ওই দলটি দুষ্কৃতীদের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করে।   ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখে আমরা একটি  তথ্য পাই এই দুষ্কৃতী দলের কয়েকজন সদস্য বর্ধমানে লুকিয়ে রয়েছে। পরবর্তীকালে বর্ধমান পুলিশের সাহায্য নিয়ে বাদাউন গ্যাঙের ছ'জন সদস্যকে বর্ধমান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই তাদের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।"
 
তিনি জানান ,"বাদাউন গ্যাঙের যে ৬ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মধ্যে সুনীল এবং বিজয়ের নামে ঝাড়খন্ডে একাধিক অপরাধে জড়িতে থাকার অভিযোগ রয়েছে। এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে বীরভূমের মুরারই এবং নলহাটি থানাতেও দু'টি অপরাধে এই বাদাউন গ্যাঙের যোগ ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি।"
 
পুলিশ সুপার বলেন, কোনও এলাকায় অপরাধ করার আগে বাদাউন গ্যাঙের সদস্যরা সেই জায়গাটিকে খুব ভালো করে 'রেইকি' করত এবং সেই কারণে তারা সেখানে বাড়ি ভাড়া নিয়েও থাকত। বাড়ি ভাড়া পেতে যাতে কোন সমস্যা না হয় সেই কারণে এই গ্যাঙের সদস্যরা নিজেদের সঙ্গে মহিলাদের এবং কোলের শিশুকে পর্যন্ত রেখে দিত। অপরাধ করতে যাওয়ার সময়ও বাদাউন গ্যাঙের সদস্যরা মহিলাদেরকে সঙ্গে রাখত এবং মহিলারা অপরাধের ঘটনায় সরাসরি সাহায্য করত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। 

মুর্শিদাবাদের তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সুতির মদনা  এলাকায় সোনার দোকানে ডাকাতি করার আগে বেশ কয়েকদিন বাদাউন গ্যাঙের সদস্য সেই এলাকা ভালো করে ঘুরে দেখেছিল। এরপর রাতের অন্ধকারে ছেনি,হাতুড়ি, স্ক্রু ড্রাইভার ব্যবহার করে ওই সোনার দোকানের শাটার ভেঙে ভিতরে ঢুকেছিল তারা।
 
পুলিশ সুপার বলেন,"বাদাউন গ্যাঙের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে  ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ে তাদের একটি ডেরার সন্ধান আমরা পেয়েছি। গতকাল সেখানে তল্লাশি চালিয়ে ডাকাতির সময় ব্যবহৃত বেশ কিছু জিনিস যেমন- কাটার, হাতুড়ি, হাঁসুয়াসহ বেশ কিছু খোওয়া যাওয়া সোনা এবং রুপোর গয়না উদ্ধার করা হয়েছে।"


 
পুলিশের অনুমান, ধৃত দুষ্কৃতী দলের সঙ্গে বাদাউন গ্যাঙের আরও কয়েকজন সদস্য জড়িয়ে রয়েছে। অমিত কুমার সাউ বলেন,"সম্প্রতি সামশেরগঞ্জের বাজারেও পরপর দু'টি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি তার সঙ্গেও বাদাউন গ্যাঙের সদস্যরা জড়িত ছিল।"
উত্তরপ্রদেশের বাদাউন গ্যাঙের সমস্ত সদস্যদের ধরতে পারলে দেশ জুড়ে অপরাধের সংখ্যা অনেকটাই কমবে। তাই মুর্শিদাবাদ পুলিশ এখন জোর কদমে 'যোগী' রাজ্যের  বাকি দুষ্কৃতীদের সন্ধানে তল্লাশি চালাচ্ছে।