আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ মানুষকে সাইবার প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এবার বিশেষ উদ্যোগ নিল মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর পুলিশ জেলা। 'সাইবার সেফ ভিলেজ' অর্থাৎ সাইবার প্রতারণামুক্ত গ্রাম গড়ে তোলার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার  সুপার অমিত কুমার সাউয়ের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সাগরদিঘি থানায় খোলা হল 'সাইবার সেল'। 

গ্রামের দরিদ্র সাধারণ মানুষরা যাতে কোনওভাবে সাইবার প্রতারণার ফাঁদে পা না দেয়, তাই তাঁদেরকে বিশেষভাবে সচেতন করে তুলতে কাজ করবে এই সাইবার সেল। পুলিশ সুপার অমিত কুমার সাউ বলেন, "প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর। অর্থাৎ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করা ভালো। তাই গ্রামের মানুষ যাতে সাইবার প্রতারণার ফাঁদে পা না দেন  তাই তাঁদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য।"

তিনি আরও বলেন, "এর জন্য আমরা সাগরদিঘির একটি নির্দিষ্ট  গ্রামকে বেছে নিয়েছি। এই গ্রাম থেকেই আমরা সাধারণ মানুষকে সাইবার সচেতনতার পাঠ দিতে শুরু করব। আমাদের উদ্দেশ্য এই গ্রামের একটিও মানুষ যাতে কোনওভাবে সাইবার প্রতারণার ফাঁদে না পরেন। এইভাবে আগামী দিন আমরা সাগরদিঘি এবং জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার অন্তর্গত প্রত্যেকটি গ্রামেই এই সচেতনতা শিবির চালাব।" পুলিশ সুপার জানান , তাঁদের লক্ষ্য আগামীদিনে এই পুলিশ জেলার সমস্ত গ্রামকে  'সাইবার সেফ' হিসেবে গড়ে তোলা। 

তিনি বলেন ,"সাইবার প্রতারণা একটি নতুন ধরণের অপরাধ। গত কয়েক বছরে দেশ জুড়ে 'ডিজিটাল লেনদেন' বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে এই অপরাধের সংখ্যাও বেড়েছে। এই ধরণের অপরাধের মোকাবিলা করার জন্য আমরাও প্রযুক্তিগত উন্নতি করছি।"

পুলিশ সূত্রের খবর, এখন থেকে সাগরদিঘির মানুষকে আর কোনওরকম সাইবার প্রতারণা সম্পর্কিত অভিযোগ জানাতে রঘুনাথগঞ্জে সাইবার ক্রাইম অফিসে যেতে হবে না। সাগরদিঘি থানাতেই  খুলে গেল সাইবার সেল। তবে শুধু সাইবার প্রতারণাই নয়, মোবাইল হারিয়ে যাওয়ার মতো অভিযোগগুলোও এখন দেখবে সাগরদিঘি  থানার এই বিশেষ সেল । সাইবার  সংক্রান্ত বড় কোনও অপরাধ হলে তবেই তা পুলিশ জেলার হেডকোয়ার্টার্স দেখবে। 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন শুরু হওয়ায় শুধু শহরেই নয়, সাইবার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষজনও। অনলাইনে কেনাকাটার প্রলোভন হোক বা লটারি জেতার খবর, নানাভাবে ফাঁদ পেতে রাখছে দুষ্কৃতীরা। এর সঙ্গে এখন নতুন সংযোজন হয়েছে 'ডিজিটাল অ্যারেস্ট' করে সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে  টাকা নিয়ে নেওয়া। 
  
মানুষ যাতে এই সাইবার প্রতারণার বিভিন্ন দিকগুলি সম্পর্কে সচেতন হন, তার জন্য শুধু সাইবার সেলই নয়, সচেতনতার পাঠ দেওয়াও শুরু হল সাগরদিঘি থানা এলাকায়। তাছাড়া সাইবার প্রতারণার অভিযোগ জানাতে এর আগে মানুষকে জঙ্গিপুর পর্যন্ত ছুটে যেতে হত। দূরত্বের কারণে অনেকেই সমস্যায় পড়তেন। আবার অনেকেই অভিযোগ জানাতেই যেতে পারতেন না।  সকলের কথা মাথায় রেখেই সাগরদিঘি থানায় খুলে গেল এই সাইবার সেল। 

সাগরদিঘি  থানার সাইবার সেলে আগত আখতার হোসেন নামে এক ব্যক্তি জানান, "গত সপ্তাহে আমার ছেলে হাওড়া থেকে বর্ধমানের দিকে যাচ্ছিল। তখন  তার মোবাইল চুরি হয়ে যায়। সেই অভিযোগের রিপোর্ট লেখাতেই আমি এখানে এসেছি।"  তিনি বলেন, "এর আগে এই ধরনের অভিযোগ জানাতে আমাদের জঙ্গিপুর যেতে হত। সেটা আমাদের পক্ষে খুবই অসুবিধাজনক ছিল। এখন ঘরের কাছে এই 'সাইবার সেল' খুলে যাওয়ায় আমাদের খুবই সুবিধা হয়েছে।