মিল্টন সেন, হুগলি: ১৩ জন শহিদের স্মরণে বসানো হলো ১৩টি আম গাছের চারা। গাছ বসিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না। ১৯৯৩ সালের একুশে জুলাই কলকাতার রাজপথে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানকারী ১৩ জন। শনিবার সেই তেরোজন শহিদের স্মৃতিতে সিঙ্গুরে বৃক্ষরোপণ করলেন মন্ত্রী বেচারাম মান্না। 

 

একুশে জুলাইয়ে তৃণমূল কংগ্ৰেসের শহিদ দিবসকে সামনে রেখে আত্মা স্টাফ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের উদ্দ্যোগে পালন করা হয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না সিঙ্গুর কৃষি দপ্তরে আম গাছের চারা বসিয়ে শহিদের স্মৃতিচারনা করেন। ১৩ জন শহিদের স্মৃতির উদ্দেশে ১৩টি গাছ বসিয়ে এই অনুষ্ঠানে সূচনা করেন মন্ত্রী। 

 

উপস্থিত ছিলেন হরিপালের বিধায়ক করবী মান্না সহ অন্যান্য আধিকারিক ও আত্মা স্টাফ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের আধিকারিকরা। এদিন মন্ত্রী বলেছেন, 'সেদিন কলকাতায় রাজ্যের মুখ্য মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে নো এপিক নো ভোট ইস্যুতে আন্দোলন হয়েছিল। রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেছিলেন ১৩ জন। সেই ১৩জন শহিদের স্মৃতিতে একুশে জুলাই ধর্মতলায় শহিদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি নানা কর্মসূচি পালিত হয়। সিঙ্গুরে এদিন ১৩টি গাছ বসিয়ে সেই শহিদদের স্মরণ করা হল। এটা একটা অভিনব উদ্যোগ। রাজ্য জুড়ে অরণ্য সপ্তাহ পালিত হচ্ছে ঠিক এই একই সময়।' 

 

আরও পড়ুন: ট্রেনে ট্রেনে ঘুরে একাই শহিদ দিবসের প্রচার মমতা-ভক্তের, দেদার বিকোচ্ছে 'একাই একশো মমতা' বই

 

৩২ বছর আগে কী ঘটেছিল ২১ জুলাই? কেন চলেছিল গুলি? ফিরে দেখা রক্তাক্ত দিন

 

১৯৩২ সালের ২১ জুলাই, মমতা ব্যানার্জির ডাকা কর্মসূচি ঘিরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল এই ধর্মতলা। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর। সেই ঘা এখনও দগদগে। তখনও তৃণমূলের জন্ম হয়নি। মমতা ব্যানার্জি তখন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী। সেই ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিতে শহরে বিভিন্ন স্থানে ছবি সহ হোর্ডিং দিয়েছে তৃণমূল। উদ্দেশ্য আজকের জেনারেশনকে একুশের গুরুত্ব বোঝানো। নেত্রী হিসেবে মমতা ব্যানার্জির লড়াইয়ের ইতিহাসটা তুলে ধরা ।

 

১৯৯৩ সাল। রাজ্যের ক্ষমতায় জ্যোতি বসুর সরকার। সিপিএমের বিরুদ্ধে ছাপ্পা-রিগিংয়ের মতো অভিযোগ নিয়মিত শোনা যেত সে-সময় বিরোধীদের মুখে। আর সেই সময় বিরোধীপক্ষের অন্যতম লড়াকু মুখ মমতা ব্যানার্জি। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য, সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে এই কর্মসূচির দিন ঠিক হয়ে ছিল ১৪ জুলাই। কিন্তু, ওই সময় প্রাক্তন রাজ্যপাল নুরুল হাসানের প্রয়াণের কারণে, কর্মসূচির দিন পিছিয়ে ২১ জুলাই করা হয়।

 

সেদিনের ঘাটন এখনও দগদগে বাংলার রাজনীতিতে। ২১ জুলাই সকাল ১০টা থেকে মহাকরণ অভিযানের জন্য জমায়েত শুরু হয়। কলকাতার পাঁচটি জায়গা থেকে যাত্রা শুরু হয়। এগোতে থাকেন যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। পুরোভাগে ছিলেন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা নিজে। বিভিন্ন মিছিলে ছিলেন সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মদন মিত্ররা। মহাকরণে পৌঁছনোর আগে পাঁচ দিক থেকে ইব্যারিকেড করে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। তাতেই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। ধুন্ধুমার শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘাত বেঁধে যায় যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের। 

 

পুলিশি বাধা ঠেকাতে শুরু হয় ইট-পাথরবৃষ্টি। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। সবমিলিয়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় মেয়ো রোড-রেড রোডের মোড়ে। বোমাও পড়ে। সারা কলকাতা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। অশান্তির ভরকেন্দ্র ছিল মধ্য কলকাতা। ধীরে ধীরে সারা কলকাতা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের ভ্যানে অগ্নি সংযোগের মতো ঘটনাও ঘটে। বিক্ষোভকারীরা এগোতে থাকে, পিছু হঠতে শুরু করে পুলিশ। তখন গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশবাহিনী। আর তাতেই প্রাণ যায় ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর। 

 

কার নির্দেশে পুলিশ সেদিন গুলি চালিয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি।

 

ছবি: পার্থ রাহা