আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাতের অন্ধকারে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হল এক সক্রিয় তৃণমূল কর্মীকে। বুধবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে ভরতপুর থানা এলাকার কুয়ে নদীর বাঁধ লাগোয়া সুনিয়া গ্রামে। মৃত তৃণমূল কর্মীর নাম ষষ্ঠী ঘোষ (৫৫)। তাঁর বাড়ি ভরতপুর থানার আলুগ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সিহালা গ্রামে। 

রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত থাকার পাশাপাশি ষষ্ঠী ঘোষের নিজস্ব ট্রাক্টর ছিল এবং জমিতে  চাষের কাজ করতেন বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। 
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল বিকাল ৪টে নাগাদ বাড়ি থেকে বের হন ষষ্ঠী ঘোষ। তারপর রাতের অন্ধকারে তিনি যখন হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন, সেই সময় কুয়ে নদীর বাঁধের কাছে তাঁকে কুপিয়ে খুন করে দুষ্কৃতীরা। 

ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে কান্দি মহকুমা হাসপাতাল পাঠায় ময়নাতদন্তের জন্য। 
ষষ্ঠী ঘোষের স্ত্রী শ্যামলী ঘোষ জানিয়েছেন, 'বুধবার বিকেল চারটে নাগাদ আমার স্বামী চাষের জমিতে কাজ করানোর জন্য শ্রমিক খুঁজতে বাড়ি থেকে বের হন। তারপর রাতের দিকে আমাদের কাছে খবর আসে বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে কুয়ে নদীর বাঁধের ধারে দুষ্কৃতীরা আমার স্বামীকে খুন করে ফেলে রেখে গিয়েছে।'

তিনি আরও বলেন,' আমার স্বামী চাষবাসের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। ছেলে, ছেলের বউ নাতি-নাতনিদের নিয়েই তাঁর সংসার। কেন তাকে এভাবে খুন করা হল, তা বুঝতেই পারছি না।' তবে মৃতের জামাই ভীমদেব পালের দাবি, 'এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন ষষ্ঠী ঘোষ। এর আগেও একবার তাঁকে খুনের চেষ্টা করা হয়েছিল।' 

আরও পড়ুন: লক্ষ্মীবারে সুখবর, একধাক্কায় সোনার দামে বিরাট পতন, দেখে নিন কলকাতায় কত

দলের কর্মী খুনের বিষয়ে ভরতপুর-১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, 'গ্রাম্য বিবাদের জেরেই এই খুন। জমি জমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কয়েকজনের সঙ্গে ওই ব্যক্তির বিবাদ চলছিল বলে আমরা শুনেছি। সম্ভবত সেই বিবাদের জেরে খুন হতে হয়েছে ষষ্ঠী ঘোষকে। মৃত ওই ব্যক্তি তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও দলীয় পদে না থাকলেও আমাদের দলের সক্রিয়  সমর্থক ছিলেন।' 

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ষষ্ঠী ঘোষের বিরুদ্ধে অতীতে একাধিক গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি এবং অস্ত্র আইনে অতীতে একাধিক মামলা হয়েছে এবং তিনি গ্রেপ্তারও হয়েছেন। জামিনে তিনি জেল থেকে ছাড়া পেলেও নিয়মিত থানায় হাজিরা দিতে হত তাঁকে। ইতিমধ্যেই এই খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দু'জনকে আটক করেছে পুলিশ। 

মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালবাগ) রাসপ্রীত সিং বলেন, 'এই খুনের ঘটনায় নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দু'জনকে আটক করা হয়েছে।' তিনি বলেন, 'প্রাথমিক তদন্তে আমাদের অনুমান এই খুনের ঘটনায় রাজনীতির কোনও যোগ নেই। পুরনো কোনও শত্রুতার কারণে এই খুন হয়ে থাকতে পারে। গোটা বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখছে।' 

ভরতপুরে তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এই বিষয়ে বলেন, 'কোনও রাজনৈতিক কারণে ষষ্ঠী ঘোষকে খুন হতে হয়নি। নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিগত লড়াই ঝামেলা ছিল। এখানে কোনও রাজনৈতিক গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটেনি। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিবাদকে কেন্দ্র করেই এই খুন।'