আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থা তৈরি করে বিজেপি এবং আরএসএস-এর তরফ থেকে মুর্শিদাবাদে তৃণমূল কংগ্রেসের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলায় প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সাধারণ মানুষের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। রবিবার জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমানের সঙ্গে দলের বিধায়ক এবং ব্লক সভাপতিদের বৈঠকে উঠে এল এমনই বিস্ফোরক তথ্য। বৈঠকের পর তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এসআইআর বাংলায় চালু হওয়ার আগেই বিজেপির এই কৌশলকে মাঠে নেমে প্রতিহত করা হবে। 


রবিবারের বৈঠকে উপস্থিত এক তৃণমূল নেতা জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই গ্রামীণ এলাকা থেকে আমাদের কাছে খবর আসছিল বিভিন্ন সংস্থা গ্রামে গিয়ে  বাড়ি বাড়ি ঘুরে 'সার্ভে' করার নামে বিভিন্ন ব্যক্তি সম্পর্কে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের কাজ করছে। 


ওই নেতা আরও বলেন, আমাদের কাছে খবর রয়েছে যে সমস্ত সংস্থাগুলো এই কাজ করছে তারা হিন্দু প্রধান এলাকার সাধারণ মানুষকে গিয়ে তাদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, জন্ম নথি দেখে সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন।  অন্যদিকে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে গিয়ে তারা বিভিন্ন মানুষের নথি দেখে তাতে ভুল রয়েছে এবং এর জন্য সমস্যায় পড়তে হবে বলে তাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করছে। 

আরও পড়ন: রামায়ণ-মহাভারতের যুগেও হয়েছিল ছট পূজা, জেনে নিন এই গল্পগুলি


তৃণমূল নেতারা বলেন, আমাদের দলের আভ্যন্তরীণ তদন্তে জানতে পেরেছি মূলত একটি সংস্থার অধীনে ছোট ছোট একাধিক সংস্থা মুর্শিদাবাদ জেলার গ্রামগুলোতে ঘুরে এই তথ্য সংগ্রহের কাজ করছে।  ই সমস্ত সংস্থাগুলো বিজেপি এবং আরএসএস দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। 


তৃণমূল সুত্রে আরও জানা গিয়েছে, গ্রামাঞ্চলে ঘুরে ঘুরে এই তথ্য সংগ্রহের কাজ পুজোর আগে থেকে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে করা হচ্ছে। সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য সোমবার থেকেই তৃণমূলের তরফ থেকে প্রচার শুরু করা হবে বলে এদিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর এই কাজে তৃণমূল কংগ্রেসের বুথ এবং অঞ্চল কমিটিগুলো ছাড়াও সমস্ত শাখা সংগঠনের সদস্যদেরকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 


লালগোলার তৃণমূল বিধায়ক তথা তৃণমূল কংগ্রেসের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার বিএলএ (১) মহম্মদ আলি বলেন,'  জাতীয় নির্বাচন কমিশন এসআইআর নিয়ে যে নির্দেশিকা দিতে চলেছে তার ফলে সাধারণ মানুষের হয়রানি হলে কীভাবে আটকানো হবে তা নিয়ে আজকের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই সংবাদ মাধ্যমকে ব্যবহার করে এনআরসি ,সিএএকে নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে এবং মূলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করা হচ্ছে।'


তিনি আরও বলেন, 'আমরা মনে করি এসআইআর-এর নামে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এনআরসি লাগু করার চেষ্টা করছে। তাই রাজনৈতিক দল হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেস প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করছে ।তবে আমরা জানতে পেরেছি ইতিমধ্যেই বিএলও-রা 'ম্যাপিং' এবং 'ম্যাচিংয়ের' কাজ শেষ করেছেন। বাকি কাজটুকু শেষ হলেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষার কাজ তাঁরা শুরু করবেন। '


মহম্মদ আলি বলেন, 'মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উপাধি নিয়ে বাধ্যবাধকতা না থাকায় এবং বাবার উপাধি অনেকেই ব্যবহার না করায় নাম এবং উপাধির মধ্যে মিল না থাকায় অনেকেই হয়রানি শিকার হয়েছেন। এটাকে কাজে লাগিয়ে যদি এসআইআর লাগু করার নামে বিজেপি কাউকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তৃণমূল তার প্রতিবাদ করবে।'


তিনি বলেন, 'এসআইআর শুরু হলে যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হয় তা সুনিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলায় প্রায় আড়াই হাজার বিএলএ (২)-কে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে।'


তৃণমূল কংগ্রেসের রঘুনাথগঞ্জ (১) ব্লক সভাপতি গৌতম ঘোষ বলেন, 'দলের নির্দেশ মেনে আমরা সোমবার থেকেই সাংগঠনিকভাবে মানুষকে সচেতন করার কাজ শুরু করতে চলেছি। এর পাশাপাশি আমাদের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির শুরু করা 'ডিজিটাল যোদ্ধা' নিয়েও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।' 


তবে গোপনে নাগরিকদের তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার যে অভিযোগ তৃণমূলের তরফ থেকে তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন বিজেপির জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুবল চন্দ্র ঘোষ। তিনি বলেন, 'আরএসএস একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। এর কাজের সঙ্গে আমাদের দলীয় রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। তবে বিজেপির সংগঠন গোটা রাজ্যজুড়েই ভালো হয়েছে। তাই বিজেপিকে নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই আমাদের সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো চেষ্টা হচ্ছে তৃণমূলের তরফ থেকে। আমরা কোনও সংস্থাকে ব্যবহার করে বেআইনিভাবে নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করছি না।'