আজকাল ওয়েবডেস্ক: আবারও শুরু হতে চলেছে সুন্দরবনের ব্যাঘ্রশুমারির কাজ। বন দপ্তর থেকে এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এই নির্দেশিকা দেখেই মাথায় হাত পড়েছে পর্যটকদের এবং ট্যুর অপারেটরদের। সাধারণত শীতের মৌসুমে পর্যটকদের ভ্রমণের অন্যতম ঠিকানা সুন্দরবন। হিমের পরশে ভোরের কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে শহরতলি। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসেই সুন্দরবনের পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ে। ভ্রমণপিপাসু বাঙালির জন্য মন খারাপের খবর জানাল বন দপ্তর।
বন দফতর সূত্রে খবর, এ বার বাঘের গতিবিধি নজরবন্দি করতে জঙ্গলের অন্দরমহলে বসানো হবে মোট ১,৪৮৪টি ট্র্যাপ ক্যামেরা। প্রায় ৪,১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই ক্যামেরাগুলি বসানো হবে। এর মাধ্যমে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বাঘের ছবি সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হবে। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, চলতি বছরে ডিসেম্বর মাসের ১১ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সুন্দরবনের বেশিরভাগ অংশ। জলপথে ভ্রমণ করা যাবে না। জঙ্গলে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসিয়ে বাঘের পায়ের ছাপ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক চিহ্ন বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে বাঘ গণনার কাজ সম্পন্ন হবে। প্রতি চার বছর এক বার সাধারণত করা হয় বাঘ শুমারির কাজ। বাঘ গণনার কাজ চলাকালীন পর্যটকদের যাতায়াত এবং শব্দ দূষণ এই কাজে বিভিন্ন ঘটাতে পারে। তাই দুদিন পুরোপুরি জঙ্গল পর্যটকবিহীন রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
নির্দেশিকায় আরও জানানো হয়েছে, শুধু পর্যটক নয়, ১১ এবং ১২ ডিসেম্বর সুন্দরবনের ভ্রমণে জন্য অনলাইন বুকিং বন্ধ থাকবে। এই নির্দেশিকার ফলে ব্যবসার অনেক ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। সুন্দরবন বোটমালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, তারা ইতিমধ্যেই পর্যটকদের বুকিং বাতিলের ব্যবস্থা শুরু করেছে এবং অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ের ক্ষতির হলেও পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ রক্ষার স্বার্থে তারা প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছেন। এবং বাঘশুমারির কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হওয়ার আশাবাদী তাঁরা।
সুন্দরবনের বাঘশুমারি প্রতি চার বছরে একবার হয়। তবে ছোট ছোট অঞ্চলভিত্তিক পর্যবেক্ষণগুলি প্রতি বছরই চালানো হয়। এই বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার বনবিভাগের মুখ্য বন আধিকারিক (ডিফও) নীশা গোস্বামী বলেন, “আগামী ১১ এবং ১২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে চলেছে সুন্দরবনের ব্যাঘ্রশুমারির কাজ। সুন্দরবন জুড়ে লাগানো হবে ক্যামেরা। সর্বশেষ বাঘ গণনায় সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১১১টি। গত চার বছরে মোট ২২টি বাঘ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ১৩৩টি। আশা করা যাচ্ছে এ বছর ডিসেম্বর মাসে যে বাঘ গণনার কাজ শুরু হবে সেই গণনায় সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।”
তবে এ বার গণনা শুধুমাত্র বাঘের সংখ্যাতেই সীমিত থাকবে না। বাঘের আচরণ, খাদ্যের জোগান এবং শিকারের প্রজাতির উপস্থিতিও বিশ্লেষণ করা হবে। এই কাজের জন্য একটি বিশেষ অ্যাপ তৈরি করেছে বন দপ্তর। এই অ্যাপের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হবে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে।
