আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত কয়েকদিন ধরেই উত্তর ও দক্ষিনবঙ্গে চলছে তীব্র দাবদাহ। এই গরম থেকে রেহাই পেয়ে শীতল হতে প্রচুর পর্যটক পাহাড়মুখী। বৃহস্পতিবার সকালে এনজেপি স্টেশনে কলকাতা থেকে একে একে আসতে শুরু করে উত্তরমুখী ট্রেনগুলি। কিন্তু ট্রেন থেকে নেমে শেয়ার ট্যাক্সি ধরতে গিয়েই চরম বিপাকে পড়েন তাঁরা। বাইরে সারি সারি পাহাড়ে যাওয়ার ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে, কিন্তু চালকদের দেখা নেই। বুধবার ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলছে ২৪ ঘণ্টার ট্যাক্সি ধর্মঘট।
জানা গিয়েছে, বুধবার শিলিগুড়ি থেকে কার্শিয়াং যাওয়ার পথে রোহিনী রোডে পর্যটকবাহী একটি ছোট গাড়ির চালককে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে এক ট্রাক চালকের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিংগামী সমস্ত ছোট গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখে বিক্ষোভে সামিল হন তরাই চালক সংগঠনের সদস্যরা। তাঁদের দাবি, অভিযুক্ত ট্রাক চালককে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। জানা গিয়েছে, আক্রান্ত গাড়িচালক মানিক বণিক বুধবার যাত্রী নিয়ে শিলিগুড়ি থেকে কার্শিয়াং যাচ্ছিলেন। রোহিনী রোডে একটি ট্রাককে ওভারটেক করার সময় ট্রাক চালক তাঁকে প্রথমে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলে অভিযোগ। এরপর গাড়ি থামিয়ে আরও কয়েকজন ট্রাক চালককে সঙ্গে নিয়ে মানিককে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সময় তাঁর গাড়িতে একাধিক পর্যটক ছিলেন।

আহত অবস্থায় ওই চালককে উদ্ধার করে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর মানিক কার্শিয়াং থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তবে অভিযোগের ২৪ ঘণ্টা পরেও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে অভিযোগ অন্যান্য চালকদের।এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন অন্য ট্যাক্সি চালকরা। এদিন সকাল থেকেই দার্জিলিং মোড় সংলগ্ন ট্রাক স্ট্যান্ডে গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাঁরা বিক্ষোভে সামিল হন। যে কারণে সকাল থেকে শিলিগুড়ি-দার্জিলিং রুটে ছোট গাড়ির পরিষেবা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: নয় বছরে কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পেলেন না! দিল্লিতে কীভাবে ভুয়ো দূতাবাস চালাতেন গাজিয়াবাদের হর্ষবর্ধন
যার জেরে চরম বিপাকে পড়েন পাহাড়ে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। কলকাতা থেকে সপরিবারে দার্জিলিং ঘুরতে এসে এমনই অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন অভিক বসু ও তাঁর পরিবার। কলকাতার সেক্টর ৫ এলাকায় কর্মরত অভিক চাকরি করেন একটি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায়। স্ত্রী , দুই সন্তান, বৃদ্ধ মা - বাবাকে নিয়ে চার দিনের ছুটিতে তিনি পাহাড়ে ঘুরতে এসেছেন। এদিন সকালে পদাতিক এক্সপ্রেসে এনজেপি স্টেশনে নেমে ট্যাক্সি ভাড়া করতে গেলেই জানতে পারেন ধর্মঘটের কথা। কোনও শেয়ার ট্যাক্সি চলছে না। বেশ কিছুক্ষণ ধরে রিজার্ভ গাড়ির জন্য খোঁজাখুঁজি করেন। সেই সময় সংবাদ মাধ্যমের সামনে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন তিনি। অভিক জানান, 'আমি একজন তথ্যপ্রযুক্তির কর্মচারী। বেশ কয়েক বছর ধরে পরিবারকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। মাস দুয়েক আগেই সপরিবারে ঘুরতে যাওয়ার কথা চিন্তা করে, অফিসে ছুটির কথা জানাই। অফিস থেকে ছুটি মঞ্জুর করলে ট্রেনের যাওয়া আসার টিকিটও কেটে ফেলা হয়। কিন্তু শিলিগুড়িতে নেমেই পাওয়া যাচ্ছে না শেয়ার ট্যাক্সি। জানতে পারলাম কোনও একটি বিষয় নিয়ে ধর্মঘট চলছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করলাম। পেলাম না। শেষমেষ রিজার্ভ গাড়ি ভাড়া করতে গিয়ে দেখছি, যেমন খুশি গাড়ি ভাড়া চাইছে। যেখানে অন্যান্য সময় শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং একটি ৭ সিটের গাড়ি ৫০০০ টাকায় পাওয়া যায় এদিন সেই গাড়িই ভাড়া চাইছে ৮০০০ টাকা। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। মানুষের দুঃসময়ের সুযোগ তুলে কিছু অসাধু চালকরা এভাবে ভাড়া বাড়িয়ে বলছে। আজ দার্জিলিং যাব নাকি শিলিগুড়িতে রাত্রি বাস করব সেই কথাই পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।'
আচমকা এই ট্যাক্সি ধর্মঘটের প্রভাবে ইতিমধ্যেই প্রচুর পর্যটক আটকে পড়েছেন শিলিগুড়িতে। তাঁদের মধ্যে কেউ এসেছেন বন্ধুবান্ধব নিয়ে আবার কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে। প্রত্যেকেই জানান, তাঁদের সকলেরই হোটেল বুকিং আছে। যদি শেষপর্যন্ত তাঁরা বৃহস্পতিবার দার্জিলিং গিয়ে পৌঁছতে না পারেন তবে না থেকেও হোটেল ভাড়া গুনতে হবে। পাশাপাশি তাঁদের যে 'ট্যুর প্রোগ্রাম' আছে সেটাও ধাক্কা খাবে। উপায় না থাকায় একদিন শিলিগুড়ি থেকেই শুক্রবার তাঁদের পাহাড়মুখী হতে হবে।
