আজকাল ওয়েবডেস্ক: জীবিত মা'কে মৃত দেখিয়ে জাল 'ডেথ সার্টিফিকেট' তৈরি করে ব্যাঙ্ক থেকে তাঁর পেনশনের সমস্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মতো এক গুরুতর ও অমানবিক অভিযোগ উঠল মায়ের ছোট ছেলের বিরুদ্ধে।
এই ঘটনায় হাওড়ার লিলুয়া থানার চকপাড়া এলাকায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতেই অভিযুক্ত ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে।
লিলুয়া থানার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের নাম তপন কুমার দাস। শুক্রবার ধৃত তপনকে হাওড়া আদালতে তোলা হয়েছে। অভিযোগকারিণী বৃদ্ধা মা, বীণাপাণি দাস, নিজেই ছেলের বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারস্থ হন।
বৃদ্ধা বীণাপাণি দাসের অভিযোগ, তাঁর ছোট ছেলে তপন তাঁকে মৃত দেখিয়ে জালিয়াতি করে তাঁর পেনশনের যাবতীয় টাকা তুলে নিয়েছে।
শুধু তাই নয়, এর ফলে তাঁর নিয়মিত পেনশনও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মা বীণাপাণি দাস সংবাদমাধ্যমকে বলেন, "আমার ছোট ছেলে আমার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। আমাকে 'মৃত' দেখিয়ে পেনশন-এর সব টাকা নিয়ে আমার পেনশন বন্ধ করে দিয়েছে। প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় আমার ছেলেই আমার পেনশন বন্ধ করে দিয়েছে।"
বৃদ্ধার অভিযোগ আরও গুরুতর। তিনি জানান, "ওর কাছেই পেনশনের সব কাগজপত্র থাকত। ও আমায় মারধরও করত। একবার আমাকে ধাক্কা দেওয়ায় পড়ে গিয়ে আমার পা ভেঙে গিয়েছে।" মায়ের এই মর্মান্তিক অভিযোগ থেকে স্পষ্ট, পারিবারিক সম্পত্তি ও অর্থের লোভেই তাঁর পুত্র এই কাজ করেছে।
অন্যদিকে, ধৃত তপন কুমার দাস তার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বরং সে তার বড় দাদা ও বাবার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগের আঙুল তুলেছে।
তার দাবি, "আমাকে দাদা ফাঁসিয়েছে। সে মেরে ধরে বাবাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। অনেকদিন ধরেই বাবা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। দাদা টাকা পয়সা নিয়ে নিয়েছে। আমার নামে মাকে মারধরের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।"
তপনের দাবি, বাবা তাকে 'নমিনি' করেছিল এবং সে কোনো টাকাই লুট করেনি। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
বৃদ্ধা মা বীণাপাণি দাস লিলুয়া থানায় অভিযোগ জানানোর পরই পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। বৃহস্পতিবারই অভিযুক্ত তপন কুমার দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জীবিত মা'কে মৃতা দেখিয়ে পেনশন হাতিয়ে নেওয়ার মতো নিন্দনীয় এই ঘটনায় গোটা এলাকার সকলেই অবাক। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
কীভাবে ডেথ সার্টিফিকেট জাল করা হল এবং ঠিক কত টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে তা নিয়ে এলাকায় সকলেই কৌতুহলী। সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিবাদের জেরেই এই ঘটনা কি না, সেই দিকটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
