আজকাল ওয়েবডেস্ক: জীবন্ত অবস্থায় মাকে পুড়িয়ে মারল ছেলে। শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায়। অভিযুক্ত একজন মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানা গিয়েছে। মৃতা বিজলি ঘোষ (৭০) ছেলেকে নিয়ে একাই থাকতেন। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার প্রবল বৃষ্টিতে সবাই যখন ঘরবন্দি সেই সময় মহেশতলা পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের সারাঙ্গাবাদ পোড়ার মাঠ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা পোড়া গন্ধ পান। প্রাথমিকভাবে তাঁরা মনে করেন কোনওভাবে বিদ্যুতের লাইনে শর্ট সার্কিট হয়ে যাওয়ার জন্য এই গন্ধ বেরোচ্ছে। গন্ধটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এরপর যখন তীব্র গন্ধ ছড়াতে থাকে এবং সেই সঙ্গে ধোঁয়ার উপস্থিতি ভালরকম অনুভব করা যায় তখন বাসিন্দারা বেরিয়ে দেখেন বিজলি ঘোষের বাড়ি থেকে ধোঁয়া ও গন্ধ বেরোচ্ছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় বজবজের দমকল বিভাগের অফিসে। জানানো হয় স্থানীয় মহেশতলা থানায়। 

মহেশতলা থানার পুলিশ এবং বজবজ ফায়ার ব্রিগেড থেকে কর্মীরা এসে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখেন মেঝেতে বিজলি দেবী অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পড়ে আছেন। বিছানায় নির্বিকারভাবে ছেলে বসে আছে। দ্রুত উদ্ধার করে বিজলিদেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় একটি হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সঞ্জয় ঘোষ নামে মধ্য পঞ্চাশের ওই অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন মানসিক ভারসাম্যহীন। প্রায়ই মায়ের উপর অত্যাচার করত। এর আগে একাধিকবার প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসেও ছেলেকে নিরস্ত করতে পারেননি। এমনকী বেশ কয়েকবার পুলিশও আসে। তাঁরাও এসে ভয় দেখিয়ে মায়ের উপর অত্যাচার করা থেকে সঞ্জয়কে বিরত করতে পারেননি। 

 

আরও পড়ুন:‌ গভীর হয়েছে নিম্নচাপ, সপ্তাহান্তেও ভারী বৃষ্টি চলবে জেলায় জেলায়

স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্ত সঞ্জয়ের বাবা মৃত্যুঞ্জয় ঘোষ একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মী ছিলেন। বেশ কয়েক বছর আগে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর ছেলেকে নিয়ে বিজলি দেবী একাই থাকতেন। কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় ছেলের অত্যাচার মায়ের উপর দিন দিন বাড়ছিল। অবস্থা যখন গুরুতর আকার ধারণ করত তখন মাঝে মাঝেই প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে সুরাহা করার চেষ্টা করতেন। শেষপর্যন্ত ঘটে গেল এই মর্মান্তিক ঘটনা।

জানা গেছে, কিছুদিন আগে মায়ের মাথাও ফাটিয়ে দিয়েছিল ছেলে সঞ্জয়। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‌সকাল থেকে পচা গন্ধ বেরচ্ছিল। বৃষ্টির মধ্যে আমরা এখানে আসিনি। তবে ঘরের দরজা–জানলা সব সময় বন্ধ থাকত। বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দিত না ওঁরা। ধোঁয়া দেখে পুলিশে ফোন করি। তারপর এই কাণ্ড।’‌ 


ইতিমধ্যেই বিজলি দেবীর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ছেলেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মহেশতলা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, মাকে জীবন্ত পুড়িয়ে খুন করেছে ছেলে। তবে খুন না কি, আত্মহত্যা তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। তদন্তে মহেশতলা থানার পুলিশ।

প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই মহেশতলায় এক নার্সের রহস্যমৃত্যুতে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। গভীর রাতে এক গৃহবধুর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। ঘটনাটি ঘটেছিল মহেশতলা পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বকতলা মোল্লাপাড়ায়। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ফের এক কাণ্ড মহেশতলায়।