আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রকৃতিকে কেউ কোনও দিন বাগে আনতে পারেননি। সেই কথা আবারও সত্যি হল। উত্তরে লাগাতার বৃষ্টির জেরে এ বার ভেঙে পড়ল সেবক-রংপো রেল প্রকল্পের ৭ নম্বর সুড়ঙ্গের স্লোপ প্রটেকশন।
 
জানা গিয়েছে, টানা বৃষ্টির জেরে মঙ্গলবার সকালে হুরমুরিয়ে ভেঙে পড়ে ওই অংশ। প্রথম বারের জন্য প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমে রেলপথ পৌঁছে দেওয়ার জন্য জোরকদমে কাজ চলছে সেবক-রংপো রেল প্রকল্পের। রেলমন্ত্রকের কাছে প্রথম থেকে চ্যালেঞ্জ ছিল এই প্রকল্প। শিলিগুড়ি থেকে রংপো প্রথম ধাপের পর রংপো থেকে গ্যাংটক রেলপথে যোগাযোগ লক্ষ্য ভারতীয় রেলের। মূলত, শিলিগুড়ি থেকে সিকিম সংযোগকারী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক প্রতি বছর প্রবল বৃষ্টিতে ধসের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। রেলপথে যাত্রা সুগম করতে ২০১৯ মে মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। পাহাড়ের ভিতর দিয়ে একাধিক সুড়ঙ্গ খুঁড়ে এবং তিস্তার উপর একাধিক ব্রিজ তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু গত কয়েকদিনে ধরে এক নাগাড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে পাহাড়ে। 

এই প্রকল্পের ৭ নম্বর সুড়ঙ্গের এডিটের রবিঝোড়া এলাকায় গতকাল থেকেই স্লোপ প্রোটেকশনে ফাটল ধরা দিয়েছিল। তবে মঙ্গলবার সকালে সম্পূর্ণ প্রটেকশন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। নির্মাণকারী সংস্থা ইরকন-এর অন্তর্গত হায়দ্রাবাদের একটি নির্মাণকারী সংস্থা এই প্রকল্পে কাজ করছিল। তবে প্রাথমিকভাবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মূলত পাহাড়ের নরম পাথরের কারণেই এটি ভেঙে পড়েছে।

আরও পড়ুন: ‘এসআইআর-এর নামে এনআরসি করা চেষ্টা’, কেন্দ্রকে ছাঁচাছোলা আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রী মমতার
 
এই বিষয়ে ইরকন-এর সিজিএম, রেনিয়া ই.টি.ই জানান, ভারী বৃষ্টির কারণে মঙ্গলবার সকালে ৭ নম্বর সুড়ঙ্গে সামনে একটি স্লোপ প্রটেকশন ধসে গিয়েছে। সকাল থেকেই সেখানে প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ইঞ্জিনিয়াররা রয়েছেন এলাকায়। নতুন করে প্ল্যান নিয়ে কাজ চলছে, তারপর পুনরায় স্লোপ তৈরির কাজ শুরু হবে। মূলত, সেবকের পাহাড়ে কাজ করা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। পাহাড়ে প্রচুর পরিমাণে মাটি রয়েছে। যা ভারী বৃষ্টির কারণে আলগা হয়ে যায়। তাই এমন বিপত্তি। তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। রেলের জন্য তৈরি সুড়ঙ্গের জায়গা খুবই সীমিত। তাই মাইনিং ও লাইনের কাজ একসঙ্গে করা যায় না। অন্যদিকে, সাধারণ গাড়ি চলাচলের জন্য সুরঙ্গ তৈরীর ক্ষেত্রে মাইনিং ও লাইনিংয়ের কাজ একসঙ্গে চলতে পারে। সে জন্য এই প্রকল্প তৈরিতে এতটা সময় লাগছে। এই মুহূর্তে আরও দু’টি সুড়ঙ্গে মাইনিংয়ের কাজ চলছে। ২০২৭-এর মধ্যেই আশা করা হচ্ছে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়ে যাবে।

২০১৯ সালে সেবক-রংপো রেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সিকিম যাওয়ার সেবক-রংপো রেললাইন ৪৫ কিলোমিটার লম্বা। ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেবক-রংপো রেলপথের ৪১.৫ কিলোমিটার রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার রয়েছে সিকিমে। এটি তিস্তা নদী এবং ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাহাড়ের ঢাল ধরে এগিয়ে গিয়েছে। প্রকল্পে রয়েছে ১৪টি সুড়ঙ্গ এবং ২৮টি সেতু। এই পথের অনেকটা অংশেই রেললাইন যাবে সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে।  কাজ শুরু হওয়ার পর গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনা ঘটেছে এই প্রকল্পে। নানা সময়ে ধসে ছ’জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ২০২২ সালের বাজেটেই সিকিমের রেল প্রকল্পে আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করে কেন্দ্র। নিউ জলপাইগুড়ি রেলস্টেশন থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে সেবক রেলস্টেশনে পুননির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সেবক স্টেশন থেকেই রংপোর উদ্দেশে ট্রেন চলাচল করবে।