মনিরুল হক, কোচবিহারঃ বাংলা জুড়ে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রথম দিনেই সমস্যায় পড়লেন বুথ লেভেল অফিসাররা। সাবেক ছিটমহল পোয়াতুর কুঠি অঞ্চলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধনের ফর্ম বিলি করতে গিয়ে তাঁদের ফিরিয়ে দেন এলাকার বাসিন্দারা।
ছিট মহলবাসীদের অভিযোগ, এসআইআর ফর্মে ২০০২ সালের তথ্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু ২০১৫ সালের আগে তারা ভারতের নাগরিক ছিলেন না। সেই কারণে তারা ফর্মটি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন।
এদিন পোয়াতুর কুঠির বাসিন্দা জিনাত আলী বলেন, “বি এল ও আমার বাড়িতে এসেছিলেন ফর্ম দিতে। সেখানে লেখা আছে ২০০২ সালের তথ্য দিতে হবে। আমি তো তখন বাংলাদেশি ছিট মহলের বাসিন্দা ছিলাম। ভারতের নাগরিকত্ব পেয়েছি ২০১৫ সালের পহেলা আগস্টে। তাই আমি ফাঁকা ফর্ম জমা দিতে রাজি নই।”
ওই এলাকার অন্য বাসিন্দা সাহেব আলী বলেন, “আমরা দু’দিন অপেক্ষা করব। যদি নির্বাচন কমিশন আমাদের জন্য বিশেষ ঘোষণা না করে, তাহলে জেলাশাসকের অফিস ঘেরাও করব।” ছিটমহল করলা গ্রামের বাসিন্দা রহমত আলী বলেন, “২০১৫ সালের ভারত সরকারের নোটিফিকেশনের মাধ্যমে আমরা নাগরিকত্ব পাই। ২০১৬ সালে ভোটার কার্ডও হয়েছে। কিন্তু এখনকার ফর্মে এমন ১১টি নথি চাওয়া হয়েছে, যা আমাদের কাছে নেই। আমাদের জন্য আলাদা নিয়ম ঘোষণা করতে হবে।”
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের পহেলা আগস্ট ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক ছিটমহল বিনিময় চুক্তি কার্যকর হয়। এতে ৫১টি বাংলাদেশি ছিট মহল ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ভারতের ১১১টি ছিট মহল বাংলাদেশের অংশ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি নোটিফিকেশন জারি করে। এই ৫১টি ছিট মহলের বাসিন্দাদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
পোয়াতুর কুঠির বিএলও বিপুল মোদক বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে আমরা বাড়ি বাড়ি ফর্ম দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ছিট মহলের বাসিন্দারা ফর্ম নিতে অস্বীকার করেছেন। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
এদিকে, প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের কাছে এই বিষয়টি পাঠানো হয়। প্রয়োজনে সাবেক ছিটমহলবাসীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এসআইআর প্রক্রিয়ার প্রথম দিনেই এমন ঘটনার জেরে প্রশাসনিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ছিটমহলবাসীদের দাবি, “আমাদের নাগরিকত্ব ২০১৫ সালে স্বীকৃত হয়েছে তাই সেই ভিত্তিতেই তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।” পরিস্থিতি সামাল দিতে নির্বাচন কমিশনের তরফে দ্রুত নির্দেশিকা জারি হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
