মঙ্গলবার ৪ নভেম্বর থেকে রাজ্য জুড়ে শুরু হতে চলেছে ভোটার নির্বাচনী তালিকার বিষয় সংশোধনী প্রক্রিয়া, এসআইআর। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে রাজ্যজুড়ে এসআইআর শুরু হওয়ার আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এসআইআর হলে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যেতে পারে বা দেশ ছাড়তে হতে পারে এমন আতঙ্কে ইতিমধ্যে রাজ্যে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু এবং আত্মহত্যার খবর সামনে এসেছে।
আর এসআইআর-এর ঠেলায় এবার 'ভূতের' দর্শন পেলেন মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা থানার অন্তর্গত হাবাসপুর খাসমহল গ্রামের বাসিন্দারা। প্রায় ৩৫ বছর নিরুদ্দেশ এবং খাতায়-কলমে বেশ কয়েক বছর আগে মৃত এক ব্যক্তিকে এসআইআর-এর জন্য নথি সংগ্রহ করতে দেখে 'ভূত' দেখার মত চমকে উঠেছেন হাবাসপুর-খাসমহল গ্রামের বাসিন্দারা। ১৯৯০ সাল নাগাদ স্ত্রী মসিয়া খাতুনের সঙ্গে কোনও একটি বিষয় নিয়ে ঝগড়া করার পর ইদের দিন বাড়ি ছেড়েছিলেন পেশায় কৃষক করিম শেখ। এরপর দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর সে পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ করেননি। করিমের ভাইয়েরা এবং স্ত্রী বহু জায়গায় তার সন্ধানে খোঁজ করলেও কোথাও ওই ব্যক্তির খোঁজ মেলেনি।
সূত্রের খবর, করিম মরে গিয়েছে এমন নথি জমা দিয়ে বছর পাঁচেক আগে তার স্ত্রী মসিয়া খাতুন এবং ওই দম্পতির মেয়ে ভুয়ো 'ওয়ারিশন সার্টিফিকেট' বার করে তাঁর নামে থাকা যাবতীয় জমি এবং অন্যান্য সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যান। করিমের বাকি আত্মীয়-স্বজনও নিশ্চিত হয়ে যান বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর কোনও ভাবে করিমের মৃত্যু হয়েছে।
তবে গত শনিবার রাতে সকলকে চমকে দিয়ে গত প্রায় ৩৫ বছর নিখোঁজ থাকার পর করিম বাড়ি ফিরেছেন। তাঁর বাড়ি ফেরার একটাই উদ্দেশ্য-রাজ্য জুড়ে এসআইআর শুরু হওয়ার আগে ভাইদের কাছ থেকে তাঁর নামে থাকা জমির দলিল এবং অন্যান্য নথিপত্র সংগ্রহ করা।
এসআইআর শুরু হওয়ার আগে খাতায়-কলমে মৃত ব্যক্তিকে গ্রামের রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখে কচিকাঁচারা আড়ালে আবডালে বলতে শুরু করেছে, 'এসআইআর ভূত ঘুরছে গ্রামে গ্রামে'।
প্রায় ৩৫ বছর আগে কেন বাড়ি ছেড়েছিলেন সে কথা আর মনে করতে চান না করিম শেখ। বর্তমানে হাওড়ার কাছে তাঁর নতুন সংসার রয়েছে। সেখানেই বর্তমান পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকেন। বাড়ি ছেড়ে করিম কোথায় গিয়েছিলেন এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আমি হাওড়া, উলুবেড়িয়া, খড়গপুর যখন যেখানে খুশি হয়েছে চলে গিয়েছি। এখন বাউড়িয়ায় থাকি।'
করিম বলেন, 'গত প্রায় ৩৫ বছরে ভগবানগোলার অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে। আমার এই এলাকার প্রায় কিছুই মনে নেই। শুধু মনে ছিল আমার বাড়ি ভগবানগোলার হাবাসপুরে। সেই স্মৃতির উপর ভর করে গ্রামে এসে পৌঁছেছি।'
তিনি বলেন, 'রাজ্য জুড়ে এসআইআর হচ্ছে। সেই কারণে আমার নিজের বেশ কিছু পুরনো নথি এবং বাড়ির দলিল দরকার। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে সেই নথি নেওয়ার জন্য আমি গ্রামে এসেছি। তবে এখানে এসে আমি জানতে পারলাম ইতিমধ্যেই সরকারি নথিতে আমি মৃত। তবে এই বিষয় নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।'
কুদ্দুস শেখ নামে করিমের এক ভাই বলেন, 'প্রায় ৪০ বছর আগে আমার ভাই বসনপুর গ্রামে বিয়ে করেছিল। ভাইয়ের স্ত্রী এবং এক মেয়ে এখনও বেঁচে রয়েছে। তবে ভাই কী কারণে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল তা আমাদের কাছে আজও স্পষ্ট নয়।'
তিনি বলেন, 'ভাই কিছু অসুবিধায় পড়ে নিজের নথি নেওয়ার জন্য গ্রামে ফিরে এসেছে। বহু বছর পরে ভাইকে দেখতে পেয়ে খুব আনন্দ হচ্ছে। ভাইয়ের যে সমস্ত নথি আমাদের কাছে রয়েছে তা দিয়ে সাহায্য করব।'
কুদ্দুস আরও বলেন, 'তবে বছর পাঁচেক আগে ভাইয়ের স্ত্রী এবং মেয়ে করিমের মৃত্যুর নথি বের করে এবং ওয়ারিশান সার্টিফিকেট নিয়ে তাঁর নামে থাকা জমি এবং অন্য সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছে।'
