আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজ্য জুড়ে এসআইআর নিয়ে যখন তোলপাড়, তখন পরিচয়পত্র দিতে না পেরে মৃতদেহ রেখে পালিয়ে গেল পরিবার। এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটল আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে।

আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের সুপার ডা: পরিতোষ মণ্ডল বলেন, গত ৫ নভেম্বর সনজিতা বিবি হার্টের সমস্যা নিয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে সিসিইউ-তে ভর্তি হন। পরেরদিন ৬ নভেম্বর সন্ধ্যা নাগাদ ওই মহিলা মারা যান। তাঁর পরিবারের সদস্য জাভেদ আলি হাসপাতালে আলিপুরদুয়ারের দমনপুরের ঠিকানা ও একটি ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। 

এরপর জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জাভেদ আলিকে মহিলার মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়। মৃতদেহ সংগ্রহের জন্য ওই মহিলার জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়া হয়। তাতেই বিপত্তি ঘটে। এরপর থেকেই নিখোঁজ মৃত মহিলার পরিবার। 

জানা গেছে, সেই সময় ওই ব্যক্তি জাতীয় পরিচয় পত্র আনতে যাওয়ার নাম করে হাসপাতালে থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে ফিরে না আশায় তাঁকে ফোন যোগাযোগ করলে তিনি মৃতদেহ নিতে অস্বীকার করেন। হাসপাতাল'কে জানান আসলে ওই মহিলার কোনও পরিচয়পত্রই নেই। এরপর থেকেই জাভেদ আলি'র মোবাইল নম্বর বন্ধ হয়ে যায়। 

আরও জানা গেছে, ওই পরিবারের সদস্যরা দিল্লিতে কাজ করতেন। দিল্লি থেকে আলিপুরদুয়ারে আসেন। কাগজপত্র দেখাতে না পারায় সন্দেহভাজন বাংলাদেশি বলে অনুমান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। এ ব্যাপারে দমনপুর এলাকায় ওই পরিবারকে খোঁজ করা হলে, তাদের পাওয়া যায়নি। উধাও জাভেদ আলি সহ তাঁর পরিবার। ওই মহিলার মৃতদেহ না নেওয়ায়, এখনও তা নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

বিহারের পর বাংলাতেও চালু হয়েছে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর প্রক্রিয়া। যার জেরে অনেকের মধ্যেই আতঙ্ক লক্ষ্য করা গিয়েছে। সম্প্রতি রাজ্য জুড়ে কয়েকটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় মৃতের পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, এসআইআর-এর কারণেই মৃত্যু হয়েছে। 

এসআইআর আতঙ্কে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে আগরপাড়ায়। প্রদীপ করের মৃত্যুতে প্রতিবেশীরা দাবি করেছিলেন, তাঁর ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে। তবুও তিনি আতঙ্কিত ছিলেন। তাই নিজেকে শেষ করে দেন। গত বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়ের জয়পুর এলাকার যুবক সফিকুল গাজি (৩৫) এসআইআর আতঙ্কে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি। তাঁরা স্ত্রী জানান, গত কয়েক দিন ধরে আতঙ্কে ছিলেন স্বামী। বার বার বলছিলেন, তাঁর কোনও পরিচয়পত্র নেই। ভাই-বাপ কেউ নেই। স্ত্রী বার বার অভয় দেওয়ার চেষ্টা করলেও গত বুধবার সকালে তিনি নিজেকে শেষ করে দেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বহরমপুর থানার অন্তর্গত গান্ধী কলোনী এলাকায় গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন এক ব্যবসায়ী। সেক্ষেত্রেও পরিবাররে দাবি ছিল, আত্মহত্যার কারণ এসআইআর আতঙ্ক। ২০০২ সালে ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় ‘দেশ ছাড়তে হবে’ এই আতঙ্কে গত ৪ নভেম্বর কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হন মুর্শিদাবাদের কান্দির মোহন শেখ (৫৫)।