আজকাল ওয়েবডেস্ক: আজ ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫। বর্ষশেষ ও বর্ষবরণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব। এই উপলক্ষে শান্তিনিকেতন কার্যত পর্যটকদের দখলে। পূর্বপল্লীর পৌষমেলার মাঠে সদ্য শেষ হয়েছে বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। কিন্তু তাতেও পর্যটকদের উৎসাহে খামতি নেই। 

কনকনে ঠান্ডায় শান্তিনিকেতনের সর্বত্র এখন জমজমাট পরিবেশ। শ্রীনিকেতন আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ বুধবার বছরের শীতলতম দিন। পারদ নেমেছে ৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অর্থাৎ কাঁপুনি দিয়ে ঠান্ডা। 

এই হাড়কাঁপানো ঠান্ডাকেই যেন উপভোগ করতে ছুটে এসেছেন হাজার হাজার পর্যটক। বর্ষশেষের ছুটি, বছরের শেষ দিনের আবেগ আর প্রকৃতির টান মিলিয়ে শান্তিনিকেতন এখন কার্যত পর্যটন উৎসবের শহর। সকাল থেকেই বল্লভপুর, গোয়ালপাড়া সংলগ্ন কোপাই নদীর পাড়, অজয়ের চর, সতীপীঠ কঙ্কালীতলা — সর্বত্রই চড়ুইভাতির আয়োজন চোখে পড়েছে। পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের দল নদীর ধারে বসে রান্নাবান্না, গানবাজনা আর গল্পে মেতে উঠেছেন।

পিকনিকের পাশাপাশি পর্যটকদের আরেক বড় আকর্ষণ ছিল সোনাঝুরি খোয়াইয়ের হাট। ঠান্ডার মধ্যেও সেখানে নজরে পড়েছে মানুষের ঢল। কাঠের হস্তশিল্প, মাটির কাজ, আদিবাসীদের তৈরি গয়না, উলের জিনিস, তামার তার দিয়ে তৈরি নানাবিধ ফ্রেম, — সব মিলিয়ে জমজমাট বেচাকেনা শুরু হয়েছে। স্থানীয় শিল্পীদের মুখেও এদিন হাসি। 

বর্ষশেষের ভিড় তাঁদের বছরের শেষ বড় রোজগারের সুযোগ এনে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন খোয়াই হাটের সম্পাদক তন্ময় মিত্র। রাস্তাঘাটের ছবিটাও ছিল অন্যরকম। বোলপুর-শান্তিনিকেতন রোড, শ্যামবাটি থেকে সোনাঝুরি যাওয়ার রাস্তা, বল্লভপুর অভিমুখী পথ — সর্বত্র পর্যটকের গাড়িতে ঠাসা। অনেক জায়গায় ধীরগতির যানজট তৈরি হয়। ভিড় সামলাতে সকাল থেকেই মাঠে নেমেছে শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ। 

পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে বাড়তি টহলদারি, সিসি ক্যামেরা ও ড্রোন নজরদারি চালানো শুরু হয়েছে। কোপাই নদী সংলগ্ন বিভিন্ন পিকনিক স্পটগুলিতেও আলাদা করে নজর দেওয়া হয় যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
কলকাতা থেকে আসা অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, 'সারা বছর কাজের চাপে শহরে আটকে থাকতে হয়। বছরের শেষে এই ঠান্ডায় শান্তিনিকেতনে আসা মানেই অন্যরকম স্বস্তি। কুয়াশামাখা খোয়াই ও সোনাঝুরি জঙ্গল ঘুরেছি, এখন কোপাই নদীর ধারে পিকনিক করছি। কাল আবার কঙ্কালীতলা আর বল্লভপুর ঘুরে দেখব।' 

অন্যদিকে দুর্গাপুর থেকে আসা মৃণাল দত্ত জানান, 'শান্তিনিকেতন বরাবরই আমাদের প্রিয় জায়গা। ঠান্ডা, খোলা আকাশ আর শান্ত ও সবুজে ভরা পরিবেশ — পিকনিক করার জন্য এর চেয়ে ভাল জায়গা হয় না।'
সব মিলিয়ে বলা যায়, পৌষমেলা শেষ হয়ে গেলেও শান্তিনিকেতনের উৎসবের আবহ একটুও কমেনি। বরং বর্ষশেষের হাড়কাঁপানো ঠান্ডা, পিকনিকের মরশুম আর পর্যটকদের ঢল মিলিয়ে শান্তিনিকেতন এখন আরও বেশি প্রাণবন্ত। বছরের শেষ দিনে কবিগুরুর কর্মভূমি যেন শুধু স্মৃতির জায়গা নয়, আনন্দ, মিলন ও উৎসবেরও এক বড় ঠিকানা হয়ে উঠেছে। 

বর্ষশেষের এই আনন্দঘন পরিবেশে শান্তিনিকেতন আবারও প্রমাণ করল — ঋতু বদলায়, মেলা শেষ হয়, কিন্তু রবি ঠাকুরের এই কর্মভূমির আকর্ষণ কখনও ফুরোয় না। প্রকৃতি, সংস্কৃতি আর মানুষের মিলনেই শান্তিনিকেতনের আসল শক্তি। আর সেই শক্তিতেই ভর করে বছরের শেষ দিনটিও এখানে হয়ে উঠেছে উষ্ণ স্মৃতির দিন — হাড়কাঁপানো ঠান্ডার মধ্যেও উষ্ণতায় ভরা।