আজকাল ওয়েবডেস্ক: বঙ্গে ঝোড়ো ব্যাটিং শুরু করেছে শীত। কনকনে ঠান্ডায় অন্যতম আকর্ষণ ছিল শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে গিয়েছিলেন মানুষ সেই মেলা উপভোগ করতে। গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছিল পৌষমেলা। চলেছে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই ছ’দিনে রেকর্ড পরিমাণ মদ বিক্রি হয়েছে বোলপুর-শান্তিনিকেতনে। আবগারি দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিক্রির পরিমাণ প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
আবগারি দপ্তর অনুযায়ী, গত ২৩ থেকে ২৮ ডিসেম্বর বোলপুর-শান্তিনিকেতন এলাকার ৪৪টি দোকান থেকে মদ বিক্রি হয়েছে ২ কোটি ৪৯ লক্ষ ৯৬ হাজার ৪১১ টাকার। এর মধ্যে দেশি মদ বিক্রি হয়েছে ৯৮ লক্ষ ৬৩ হাজার ২৪০ টাকার, বিলিতি মদ ১ কোটি ২৫ লক্ষ ২৫ হাজার ৭৪০ টাকার এবং বিয়ার বিক্রি হয়েছে ২৬ লক্ষ ৭ হাজার ৪৩০ টাকার। বিক্রেতাদের দাবি, বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় মদ বিক্রির অঙ্ক অনেকটাই বেশি। ব্যবসা ভাল হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই চওড়া হাসি সকলের ঠোঁটে।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ ডিসেম্বর চিরাচরিত রীতি ও পরম্পরা মেনে ব্রহ্ম উপাসনার মধ্য দিয়েই শুরু হয় এ বছরের পৌষ উৎসব। এই উপলক্ষে শান্তিনিকেতনের ছাতিমতলায় মানুষের ঢল নেমেছিল। এর পাশাপাশি, শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লির মাঠে জমে উঠছিল ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। এ বছর বিশ্বভারতী ও শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের উদ্যোগেই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৩৫০টি স্টল বসেছিল মেলায়। রাজ্য ও জেলা প্রশাসন মেলা আয়োজনে সব রকম সহযোগিতা করছিল।
প্রতিবছরের মতো এবছরও মেলার প্রদর্শনী প্রাঙ্গনে ডালি সাজিয়েছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কলাভবন, শিল্প সদন, এনসিসি, পাঠভবন, যৌগিক কলা ও বিজ্ঞান ভবন নিজেদের নানা বিষয় তুলে ধরে প্রদর্শনী করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রভবনের উদ্যোগে এ বছর আয়োজন করা হয়েছিল ‘বিশ্বে বিশ্বকবি’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। যা সাধারণ মানুষ, আগত পর্যটক ও রবীন্দ্র অনুরাগীদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছে। এই প্রদর্শনীর মূল বিষয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভ্রমণ এবং সেই ভ্রমণের সঙ্গে যুক্ত তাঁর ভাবনা, দর্শন ও সৃষ্টিশীলতার প্রভাব।
১৮৪৩ সালের ২১ ডিসেম্বর (৭ পৌষ) মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছে ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হন। পরবর্তীকালে এই ধর্মের প্রচারও করেন। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে দেবেন্দ্রনাথ ১৮৪৫ সালে কলকাতার গোরিটির বাগানে উপাসনা, ব্রাহ্মমন্ত্র পাঠের আয়োজন করেন। এভাবেই সূচনা হয় পৌষমেলার। পরে ১৮৬২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে আশ্রম প্রতিষ্ঠার কথা ভাবতে শুরু করেন। ভাবনার দীর্ঘদিন বাদে ১৮৯১ সালে ব্রহ্মমন্দির বা উপাসনাগৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়। এখান থেকেই শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসবের সূচনা। ১৮৯৪ সালে এই উৎসবের পাশাপাশি মন্দির সংলগ্ন মাঠে শুরু হয় পৌষমেলা।
