আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মূলত বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি সন্দেহে হামলার ঘটনার প্রতিকার চেয়ে এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন বহরমপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী । মঙ্গলবার নয়া দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে  গিয়ে  তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে এবং চিঠি লিখে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর বারবার হওয়া হামলা এবং বৈষম্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য তথা বহরমপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী। 

প্রসঙ্গত বিজেপি শাসিত দিল্লি, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র , অসম-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে  গত কয়েক মাস ধরে বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর বাংলাদেশি সন্দেহে হামলার ঘটনা  ঘটে চলেছে। এর পাশাপাশি বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যে  ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও মালদা, মুর্শিদাবাদ-সহ আরও কয়েকটি জেলার পরিযায়ী  শ্রমিকদের বাংলাদেশি সন্দেহে পুলিশ অকারনে হয়রানি করছে এবং আটকে রাখছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকী বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য বিজেপি শাসিত কয়েকটি রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকজন পরিযায়ী  শ্রমিককে জোর করে বাংলাদেশে 'পুশ ব্যাক' করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।  

তবে সাম্প্রতিককালে মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নির্যাতনের সবথেকে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িশার সম্বলপুর জেলায়। সেখানে মুর্শিদাবাদের সুতি থানা এলাকার বাসিন্দা   জুয়েল রানা নামে এক যুবককে বাংলাদেশি সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে ওড়িশার স্থানীয় কিছু বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গ এবং মালদা জেলার  পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজমিস্ত্রি হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কদর থাকলেও বারে বারে তাঁদের উপর বাংলাদেশি সন্দেহে হামলার ঘটনার কঠোর নিন্দা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি-সহ তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি। 

একাধিকবার বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকে বাংলা ভাষাভাষী পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী  শ্রমিকদের উপর বাংলাদেশি সন্দেহে নির্যাতন বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। 

রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে এবার গোটা বিষয়টি নিয়ে সরব হলেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরী। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গোটা বিষয়টি খুলে বলেন অধীর। অধীর প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বিভিন্ন রাজ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসন পর্যন্ত 'বাংলাদেশি'এবং 'বাংলাভাষী'র  মধ্যে  পার্থক্য করতে পারছে না। কোনও অপরাধ না করেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বাংলাভাষী মানুষদের জেলে যেতে হচ্ছে।  প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এই চিঠিতে অধীর ওড়িশার সম্বলপুরে জুয়েল শেখকে পিটিয়ে মারার ঘটনারও উল্লেখ করেছেন। 

চিঠিতে অধীর প্রধানমন্ত্রীকে আরও অনুরোধ করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে যেন প্রত্যেক রাজ্য সরকারের কাছে নির্দেশ দেওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষাভাষী শ্রমিকদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করার জন্য। যাতে তাঁরা ভারতবর্ষের যেকোনও  জায়গায় শান্তিতে এবং নিরুপদ্রবে কাজ করতে পারেন।
 
সাক্ষাতের পর বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অধীর জানান,"প্রধানমন্ত্রীকে গোটা বিষয়টি জানালেও তিনি বলেছেন বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না, খোঁজ নিয়ে দেখবেন।"
 
অধীর বলেন,"সারা দেশ জুড়ে যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর বাংলাদেশি সন্দেহে অত্যাচার করা হচ্ছে এতে দেশের অর্থনীতি  ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকরা কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট রাজ্যে গিয়ে সেখানকার অর্থনীতিতে অবদান রাখেন তা নয়, তাঁরা  পশ্চিমবঙ্গ এবং জেলার অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।"