আজকাল ওয়েবডেস্ক: গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। আলাদা রাজ্য হিসেবে গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে একজন মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে।
দেশের প্রাক্তন উপ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তথা অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার পঙ্কজ কুমার সিংকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। শুক্রবার কেন্দ্রের তরফে এই নিয়োগপত্র পাঠানোর পরেই শনিবার মোদিকে চিঠি লিখেছেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, কেন্দ্রের তরফে এই পঙ্কজ কুমার সিংকে নিয়োগ করার আগে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করা হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল।
মমতার দাবি, গোর্খাল্যান্ড সংক্রান্ত যে কোনও উদ্যোগ নেওয়ার আগে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা জরুরি। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে শান্তি ফেরানো গেছে।
আলোচনা ছাড়া কোনও পদক্ষেপ নিলে অঞ্চলটির শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে। সে কারণে এই চিঠি প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আমি গভীরভাবে বিস্মিত ও হতবাক হয়েছি, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গে গোর্খা সম্প্রদায় সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা চালানোর জন্য পঙ্কজ কুমার সিংকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ করেছে’।
তাঁর দাবি, এই নিয়োগটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কোনও ধরনের পরামর্শ বা আলোচনা ছাড়াই করা হয়েছে। যদিও বিষয়টি সরাসরি সম্পর্কিত গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এলাকার প্রশাসনের সঙ্গে। জিটিএ সাধারণত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। এই ধরনের একতরফা সিদ্ধান্ত সমবায়ী ফেডারেল ব্যবস্থার চেতনার পরিপন্থী, যা সংবিধানের অন্যতম মৌলিক ভিত্তি।
উল্লেখ্য, গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠিত হয়েছিল ২০১১ সালের ১৮ জুলাই দার্জিলিংয়ে স্বাক্ষরিত এক ত্রিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে। সেখানে অংশগ্রহণ করেছিল ভারত সরকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (জিজেএম)।
সেই সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। জিটিএ গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ি অঞ্চলের সামাজিক-অর্থনৈতিক, অবকাঠামোগত, শিক্ষাগত, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা, একইসঙ্গে গোর্খা সম্প্রদায়ের জাতিগত পরিচয় রক্ষা করা এবং পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে উৎসাহিত করা যা পাহাড়ের ঐক্য ও সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, 'পশ্চিমবঙ্গ সরকার দৃঢ়ভাবে মনে করে যে গোর্খা সম্প্রদায় বা জিটিএ (গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অঞ্চল সংক্রান্ত যে কোনও উদ্যোগ অবশ্যই রাজ্য সরকারের পূর্ণ পরামর্শ ও সহযোগিতার মাধ্যমে গ্রহণ করা উচিত। যাতে দীর্ঘ প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত এলাকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা অটুট থাকে।'
তিনি আরও লেখেন, 'এই সংবেদনশীল বিষয়ে একতরফা কোনও পদক্ষেপ অঞ্চলটির শান্তি ও সম্প্রীতির স্বার্থে মোটেই অনুকূল হবে না। সুতরাং, আমি আপনাকে অনুরোধ করছি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পূর্বপরামর্শ ও যথাযথ আলোচনার বাইরে গিয়ে যে নিয়োগপত্রটি জারি করা হয়েছে, তা পুনর্বিবেচনা করে প্রত্যাহার করার জন্য। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে প্রকৃত সহমর্মিতা ও ফেডারেল চেতনার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়াই প্রত্যাশিত।'
