গোপাল সাহা

রাজনীতির বহু ঝড়-জল ও ইডি-সিবিআইয়ের ধাক্কা সামলে নিয়ে ফের স্বমহিমায় মাতৃবন্দনায় মেতে উঠেছেন অনুব্রত মণ্ডল। মাঝে দু’টি বছর বহু ঝড় ঝাপ্টা ও কেন্দ্রের রাজনীতির চাপে পরে কিছুটা ছন্দপতন হয়েছিল। একই সঙ্গে ভাটা পড়েছিল কালীবন্দনায়। ইডি-সিবিআইয়ের জাল কেটে আংশিক মুক্তি পেয়েও ২০২৫-এ ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে মমতার পাশে তাঁর জায়গা সুনির্দিষ্ট করতে পারেননি কেষ্ট। তাই নিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে বিতর্ক কম ছিল না কেষ্টর বীরভূমের রাজনীতিতে পুনরুত্থান নিয়ে। তবে এবার সবকিছু অতীত। সব রাজনৈতিক বিপর্যয়কে অতিক্রম করে বীরভূমের রাজনীতিতে ফের ছন্দে ফিরেছেন কেষ্ট। 

দলের কোর কমিটিতে ফের গুরুত্ব পাওয়ার পরেই নতুন উদ্যমে এবার বোলপুরে তাঁর প্রিয় কালীপুজো হচ্ছে আগের চেয়ে আরও বড়, আরও জাঁকজমকপূর্ণ। বোলপুরের তৃণমূল পার্টি অফিসে এখন সাজো সাজো রব। সারাদিন ধরে চলছে প্যান্ডেল সজ্জা, আলো, ফুল আর সোনার গয়না দিয়ে ‘মা’-কে সাজানোর প্রস্তুতি।

স্বর্ণের মোহে মাতোয়ারা বোলপুর

২০২১ সালে মা কালীকে অনুব্রত সাজিয়েছিলেন প্রায় ৫৭০ ভরি সোনার গয়নায়। মুকুট থেকে বাজুবন্ধ, বাউটি, হার, আংটি  কী ছিল না মায়ের সজ্জায়! তারপর এল গরু পাচার মামলার ঘূর্ণিঝড়, অনুব্রতের জেলযাত্রা, আর সেই সোনার গয়নাতেও পড়েছিল তদন্তের ছায়া। তবুও, সব বাধা পেরিয়ে এবার ফের মায়ের গয়না নিয়ে উৎসাহ তুঙ্গে। দলীয় সূত্রের খবর, এই বছরও মা কালী সোনায় মুড়ে থাকবেন। যদিও অনুব্রত নিজে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। শুধু জানিয়েছেন, মায়ের যা গয়না আছে, সবটাই পরানো হবে। তিনি নিজে হাতে পরান না, আগের মতোই যাঁরা সাজান, তাঁরাই সাজাবেন।

৪০ বছরের পুজো, অপরিবর্তিত ঐতিহ্য

অনুব্রতের কালীপুজোর ইতিহাস প্রায় চার দশকের পুরনো। একসময় বোলপুর পার্টি অফিসের পাশে নীচতলায় শুরু হয়েছিল এই পুজো। পরে নির্মিত হয় দোতলা মন্দির, সেখানেই এখন পুজো হয় প্রতি বছর। এই কালীপুজো নিয়ে স্থানীয়রা বলেন, “কেষ্টর রাজনৈতিক উত্থান যেমন হয়েছে, তেমনই বেড়েছে পুজোর জাঁকজমকও। জেলা রাজনীতিতে যতটা শক্তিশালী ছিলেন, মা কালীও ততটাই সোনায় মোড়া হয়েছেন।”

মায়ের ভোগ, মানুষের উৎসব 

বলাবাহুল্য, এই পুজো শুধু অনুব্রত বা দলের নয়, পুরো বোলপুরের উৎসব। পুজোর রাতে এলাকার হাজারও মানুষ ভিড় করেন পার্টি অফিসে। এবারও প্রায় তিন হাজার মানুষের ভোগের আয়োজন হচ্ছে।

আরও পড়ুন: অভিষেকের ডাকে বিপুল সাড়া, ডিজিটাল যোদ্ধা হতে চেয়ে ২৪ ঘণ্টায় আবেদন ৫০ হাজারের, দাবি তৃণমূলের

পুজো নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে কেষ্ট বলছেন, “ইদানীং বসে খাওয়ার লোক কমে গেছে, তাই মাটির সরায় ভোগ দেব। অনেকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ভাগ করে খেতে পারবেন, এটাও ভাল লাগে।”

রাজনীতিতে নতুন জোয়ার, পুজোয় পুরনো চেনা ছন্দ 

ইডি-সিবিআইয়ের জটিল অধ্যায় পেরিয়ে এখন অনুব্রত দলের মূল স্রোতে। মমতা নিজে তাঁকে কোর কমিটির আহ্বায়ক করেছেন। দলীয় কর্মীরা বলছেন— “যখন কেষ্ট দাদা ভাল থাকেন, বোলপুরও জেগে ওঠে।”

তাই এবছর কালীপুজোর প্রস্তুতি শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং একজন নেতার পুনরুত্থানের প্রতীক। সোনায় মোড়া মা কালী, মাটির সরায় ভোগ, আর ভিড় জমা বোলপুর পার্টি অফিস— সব মিলিয়ে কেষ্টর কালীপুজোই যেন এ বছর বীরভূমের রাজনীতির সবচেয়ে উজ্জ্বল আলো।