আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অশান্তি একপ্রকার চরমে পৌঁছেছে। এই ঘটনার পর থেকে মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে রাতের অন্ধকারে পদ্মা তীরের গ্রামগুলোকে এক অদ্ভুত নিরবতা গ্রাস করেছে। গত বেশ কিছুদিন ধরে সন্ধে নামলেই জঙ্গিপুর মহকুমার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে ভারী বুটের শব্দ এখন রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জোরে কথাও খুব একটা শোনা যায় না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফের পাশাপাশি এবার নজরদারি বাড়ালো জঙ্গিপুর পুলিশ। 

জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার শীর্ষ আধিকারিকদেরকে নিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকা ঘুরে দেখলেন পুলিশ সুপার অমিত কুমার সাউ। পুলিশ সুপার রঘুনাথগঞ্জ থানার অন্তর্গত আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী এলাকা, গিরিয়া, সেকেন্দা গ্রাম পঞ্চায়েতের পাতলাটোলা , ভৈরবটোলা সহ একাধিক গ্রাম পায়ে হেঁটে এবং মোটরসাইকেল করে ঘুরে দেখেন। এলাকাগুলোর  নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য পুলিশ সুপার একাধিক পরামর্শ দেন পুলিশ কর্মীদের। 

প্রসঙ্গত, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশের জঙ্গি নেতা ওসমান হাদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সে দেশে যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে তার ছায়া পড়েছে এপারেও। বাংলাদেশের জঙ্গিরা প্রকাশ্যে তীব্র ভারত বিদ্বষী বক্তব্য রাখতে শুরু করায় গোয়েন্দা দপ্তরের বেশ কিছু কর্তা মনে করছেন বাংলাদেশের কট্টরপন্থী জঙ্গিরা এই সময় সীমান্ত পার হয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করতে পারে। 

পুলিশ সূত্রে খবর, জঙ্গিপুর মহকুমার অন্তর্গত রঘুনাথগঞ্জ , সুতি , সামশেরগঞ্জ  ব্লকগুলোতে বিস্তীর্ণ এলাকায় পদ্মা নদীর চর রয়েছে। প্রতিবছর বর্ষার সময় আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী বেশ কিছু এলাকায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যায়। সেই কারণে মুর্শিদাবাদ জেলায় দুই দেশের সীমান্তে বিস্তীর্ণ অংশে এখনও বেড়া দেওয়ার কাজ শেষ করা যায়নি। 

এর সুযোগ নিয়ে ভারতে সন্ত্রাসবাদী কাজ করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের জঙ্গিরা  যাতে কোনওভাবেই প্রবেশ করতে না পারে তা সুনিশ্চিত করতে  বিএসএফের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের তরফ থেকেও টহলদারি প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। 

স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরে রাতের অন্ধকারে গ্রামের মধ্যে ঘনঘন পুলিশের 'হাই বিম' টর্চ লাইট জ্বলে উঠছে। এর পাশাপাশি বিএসএফ জওয়ানরাও তীব্র ঠান্ডা এবং কুয়াশাকে উপেক্ষা করে একদম সীমান্ত এলাকায় দাঁড়িয়ে নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন। 

পুলিশের এক আধিকারিক জানান, সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে কোনও অপরিচিত ব্যক্তি আসছে কিনা তার খোঁজ রাখার জন্য সাদা পোশাকের পুলিশ নিয়মিত নজরদারি করছে। গ্রামে অপরিচিত কাউকে দেখলে পুলিশকে খবর দিতে বলা হয়েছে। 

সূত্রের খবর, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উত্তেজনার পর দুই দেশের মধ্যে চোরাচালানকারীদের যে অবৈধ 'রুট'গুলো ছিল সেগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার আশেপাশে রাতের অন্ধকারে কাউকে ঘেঁষতে  দেওয়া হচ্ছে না। 

জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার অমিত কুমার সাউ বলেন,"রঘুনাথগঞ্জ থানার গিরিয়া, সেকেন্দ্রা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাগুলোর খুব কাছে ভারত -বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যাতে কোনও ধরনের অনুপ্রবেশ না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশের তরফ থেকে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমরা বিএসএফের সঙ্গেও সমন্বয় রেখে কাজ করছি।"
 
তিনি জানান ,"এলাকাতে যেকোনও ধরনের অপরাধ রোখার জন্য নিয়মিত অনুশীলন করা হচ্ছে। এছাড়াও গ্রামের কোন কোন এলাকায় নতুন করে সিসিটিভি বসানোর দরকার রয়েছে তাও আমরা খতিয়ে দেখছি।"
 
পুলিশ সুপার আরও বলেন," যেকোনও ধরনের অশান্তি আটকানোর জন্য পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। এলাকার সমস্ত মানুষ, বিএসএফ , বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে আমরা কাজ করছি।"