আজকাল ওয়েবডেস্ক: লক্ষ্য থাকত বড় ব্যবসায়ীরা। ব্যবসার প্রয়োজনে যাদের প্রয়োজন মোটা অঙ্কের টাকা। আচমকা টাকার প্রয়োজনে এঁরা নগদে ধার নিতেন। আর সেই ধারের টাকার মধ্যেই গুজে দেওয়া হত হুবহু ৫০০ টাকার আদলে তৈরি এই কাগজের টুকরো। একেবারে আসল নোটের মতো দেখতে এই নোটে সবকিছু থাকলেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া'র জায়গায় লেখা মনোরঞ্জন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। সেটাও এত সুন্দর করে ছাপানো যে আচমকা দেখলে বোঝার উপায় নেই। গত শুক্রবার সন্দেশখালি এলাকার একটি গেস্ট হাউস থেকে দুই প্রতারককে গ্রেপ্তারের পর তাদের হেফাজত থেকে এরকম বিরাট পরিমাণ টাকার আদলে তৈরি কাগজের টুকরো পেয়েছে পুলিশ। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, যদি এগুলো সত্যি সত্যি আসল টাকা হত তবে এর মূল্য হত ৭ কোটি টাকা। এই মামলায় বীরভূমের রামপুরহাট থেকে এক মহিলাকে গ্রেপ্তার করেছে বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ। 

এবিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার মেহেদি হাসান জানান, 'ধৃত মহিলার নাম তিস্তা সেন। সে এই মামলায় যুক্ত। এবিষয়ে তদন্ত চলছে এবং আমাদের সন্দেহ আরও কেউ এই দলটির সঙ্গে যুক্ত আছে।' অভিযুক্ত মহিলা উত্তর ২৪ পরগণার রাজারহাট এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। এই মামলায় এর আগে আরও দু'জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃতরা সিরাজ উদ্দিন মোল্লা এবং দেবব্রত চক্রবর্তী বলে পুলিশ জানায়। দু'জনেই দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাসিন্দা। 

বসিরহাট জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, মহিলা-সহ যে দলটি ধরা পড়েছে তারা সকলেই কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের হাতে এর আগেও গ্রেপ্তার হয়েছিল। অভিযোগ, জালনোট ছাড়াও এরা জমি কেনাবেচার কেলেঙ্কারিতেও যুক্ত। আপাতত গ্রেপ্তার হওয়া তিন অভিযুক্তের মধ্যে তিস্তা সেন নামে ওই মহিলা দলে এদের মধ্যে উপরে ছিল। অপরাধের পরিকল্পনা থেকে কীভাবে সেটা করা হবে তা ঠিক করতে অনেকটাই বড় ভূমিকা সে নিত বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।‌ ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পারে, ঝাড়খণ্ডে পালিয়ে যাওয়ার জন্য তিস্তা সেন ছক কষছিল। রবিবার তাকে একটি গেস্ট হাউস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।‌ তাকে ১০ দিনের হেফাজতে চেয়ে আদালতে পেশ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: শিবের তাণ্ডবনৃত্যের ভঙ্গিমায় কিসের ইঙ্গিত? সার্নের পদার্থবিদ্যার গবেষণাগারে কেন রয়েছেন নটরাজ?

কীভাবে কাজ করত এই চক্রটি? প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পারে নগদে টাকা ধার দেওয়ার অছিলায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে এরা নিয়ে আসত সুবিধাজনক জায়গায়। এরপর কিছু পরিমাণ আসল টাকার বান্ডিলের মধ্যে গুজে দেওয়া হত এই টাকা এবং জাল ভারতীয় টাকা।‌ পরে যখন ওই ব্যবসায়ী বিষয়টি খেয়াল করতেন তখন আর কিছু করার থাকত না। অভিযুক্তরা সটান অস্বীকার করত এবিষয়ে তাদের কোনো যোগাযোগের কথা।

আরও পড়ুন: মৃত্যুর ৫৭ বছর পরে ডিউটিতে রয়েছেন এই ভারতীয় সেনা, তাঁর নাম শুনে এখনও থরথরিয়ে কাঁপে শত্রুরা

শুক্রবার ১৮ জুলাই সন্দেশখালি ধামাখালি এলাকার একটি গেস্ট হাউসের সামনে একটি গাড়ি এসে দাঁড়ায়। স্থানীয়রা দেখেন গাড়ি থেকে নামানো হচ্ছে একের পর এক বিস্কুটের পেটি। এলাকার একটি সূত্র জানিয়েছে, গেস্ট হাউস সম্পর্কে স্থানীয়দের ধারণা খুব একটা ভালো নয়। সেইসঙ্গে যারা এই পেটিগুলি নামাচ্ছিল তাদের সন্দিগ্ধ আচরণ দেখে লোকের সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা স্থানীয় সন্দেশখালি থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে তল্লাশি চালিয়ে গ্রেপ্তার করে দুই অভিযুক্তকে‌। বাজেয়াপ্ত করে মনোরঞ্জন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া লেখা এই ৫০০ টাকার নোটের আদলে কাগজ। এরপরেই তদন্ত চালিয়ে বীরভূম থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ঘটনার সঙ্গে জড়িত ওই মহিলাকে। তবে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ভাবিয়ে তুলেছে পুলিশকে সেটা হল এই ৫০০ টাকার মতো দেখতে কাগজগুলি কোথায় ছাপা হয়েছিল এবং তার পরিমাণ কত?