আজকাল ওয়েবডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি লিখে সাম্প্রতিক দু’টি পদক্ষেপ নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
তাঁর দাবি, এই পদক্ষেপগুলি বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দলকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য করা হচ্ছে। এই কারণে ভোটের নিরপেক্ষতা নষ্ট হতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
দু’মাসের মধ্যে এত দ্রুততার সঙ্গে ভোটার তালিকায় এসআইআরের কাজ করাটা বিএলও-দের জন্য চাপের। চিঠিতে একথা জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। সোমবার নির্বাচন কমিশনকে পাঠানো এই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী দু’টি প্রধান বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম আপত্তি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর থেকে জারি হওয়া কর্মী নিয়োগের একটি বিতর্কিত প্রস্তাব নিয়ে। তিনি চিঠিতে লিখেছেন, ‘প্রথমত, জেলা আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তাঁরা যেন চুক্তিভিত্তিক ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের বা বাংলা সহায়তা কেন্দ্রের কর্মীদের নির্বাচনী কাজে আর ব্যবহার না করেন।
দ্বিতীয়ত, সিইও-র দপ্তর এক বছরের জন্য ১০০০ ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও ৫০ জন সফটওয়্যার ডেভেলপার নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।’ বাংলায় এসআইআরের কাছে জটিলতা, একাধিক সমস্যার কথা জানাতে দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছিলেন তিনি।
সেই অনুযায়ী ১০ জন সাংসদের একটা দলও গড়ে দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর তরফে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনের কছে সময় চান।
সেইমতো, এবার সাড়া মিলল কমিশনের তরফে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, আগামী ২৮ নভেম্বর তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করবেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির জোড়া চিঠি এবং ডেরেক ও ব্রায়েনের আবেদন পর সময় দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আলোচনায় বাংলায় এসআইআরের ক্ষেত্রে যাবতীয় সমস্যার কথা শুনবে কমিশন।
জানানো হয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেসের পাঁচ সদস্যের দল দিল্লিতে কমিশনের দপ্তরে গিয়ে দেখা করতে পারে। ২৮ নভেম্বর বেলা ১১টা নাগাদ তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন।
তবে তৃণমূলের হয়ে কারা কারা প্রতিনিধি হিসেবে যাবেন সেই নামের তালিকায় আগে থেকে দিয়ে দিতে হবে কমিশনকে। উল্লেখ্য, চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, জেলা স্তরে যেখানে কাজের জন্য লোক রয়েছে, সেখানে কেন এত বিপুল সংখ্যক কর্মীকে বহিরাগত সংস্থার মাধ্যমে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ল?
তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ, এর মাধ্যমে কোনও রাজনৈতিক দল নিজেদের ‘স্বার্থসিদ্ধি’ করতে চাইছে। বিজ্ঞপ্তি জারি করার সময় এবং পদ্ধতি নিয়ে তাঁর গভীর সন্দেহ রয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
বেসরকারি হাউজিং কমপ্লেক্সের ভেতরে ভোট কেন্দ্র তৈরি করার প্রস্তাব নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানা গিয়েছে, নির্বাচন কমিশন এই বিষয়টি বিবেচনা করছে। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এটি ‘ভীষণ সমস্যাজনক’ একটি প্রস্তাব।
কারণ, ঐতিহ্য অনুযায়ী ভোট কেন্দ্রগুলি সাধারণত সরকারি বা আধা-সরকারি ভবনেই তৈরি হয়, যাতে সবাই সহজে সেখানে পৌঁছতে পারে এবং নিরপেক্ষতা বজায় থাকে।
তাঁর বক্তব্য, বেসরকারি ভবনে ভোট কেন্দ্র তৈরি হলে ভোটের প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হবে। এর ফলে সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ সুবিধাভোগী আবাসনের বাসিন্দাদের মধ্যে একটি বৈষম্য তৈরি হবে।
মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কেন এই ধরনের পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে? কোনও রাজনৈতিক দলের চাপেই কি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে?’
এই ধরনের সিদ্ধান্ত ভোটের সুষ্ঠুতার উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে বলেও তিনি মনে করেন। চিঠির শেষে মমতা নির্বাচন কমিশনারকে অনুরোধ করেছেন, এই দু’টি বিষয় দ্রুত নিরপেক্ষভাবে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে খতিয়ে দেখতে। তাঁর মতে, নির্বাচন কমিশনের সম্মান ও বিশ্বাসযোগ্যতা সব সময় বজায় রাখা খুব জরুরি।
