মিল্টন সেন, হুগলি, ১১ নভেম্বর: পনেরো বছর আগের ঘটনা। গুড়াপে নৃশংস ভাবে খুন হন তৃনমূল কর্মী ক্ষুদিরাম হেমব্রম। ঘটনায় ৮ জন সিপিআইএম কর্মীর যাবজ্জীবন সাজা ঘোষনা করল চুঁচুড়া আদালত। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া চলার পর গত ৬ নভেম্বর অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। মামলার সরকারি আইনজীবী ছিলেন চণ্ডি ব্যানার্জি। জেলা মুখ্য সরকারি আইনজীবী শঙ্কর গাঙ্গুলি জানিয়েছেন, ঘটনা ঘটেছিল ২০১০ সালের ১৮ই মার্চ। সেদিন রাতে লালু হাসদার নেতৃত্বে বেশ কিছু দুষ্কৃতী লোহার রড তির ধনুক টাঙ্গি ইত্যাদি নানান ধারালো অস্ত্র নিয়ে তপন রুইদাসের বাড়িতে ঢোকে। নৃশংস ভাবে ক্ষুদিরাম হেমব্রম কে মারধর করে। রক্তাক্ত অবস্থায় ক্ষুদিরাম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটে তপন রুইদাসের স্ত্রী ভাইয়ের স্ত্রী তাঁর মা এবং তাঁর ছেলের সামনে।
ঘটনাস্থল ছেড়ে যাওয়ার আগে তপনবাবুর স্ত্রী এবং তাঁর ভাইয়ের স্ত্রীকে ভয় দেখিয়ে সেই রক্ত মুছে দিতে বাধ্য করা হয়। শুধু তাই নয়, যাওয়ার সময় হুশিয়ারি দেওয়া হয়, কেউ যদি এই ঘটনা কাউকে জানায় তাহলে তাঁদের সবাইকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। তদন্ত চলাকালীন সাক্ষীদের পরীক্ষার নিরীক্ষা করে পুলিশ এবং বেশ কিছু সাক্ষীর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দী করায়। এই মামলায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করে গুড়াপ থানার পুলিশ। মামলার বিচার পর্ব শুরু হয় ২০১০ সালের ২০ জুলাই। আসামীদের বিরুদ্ধে ৪৪৮/ ৩০২/ ১৪৯/ ২০১/১৪৯ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়।

২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর আদালতে এই মামলার চার্জশিট পেশ করে। সরকারপক্ষে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মামলা চলাকালীন অমর রুইদাস এবং নেপাল মালিক এই দুজন আসামীর মৃত্যু হয়। সাক্ষ্য গ্রহণের পরে আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩১৩ ধারা অনুযায়ী আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব শুরু হয়। অভিযুক্ত সিদ্ধেশ্বর মালিক তার জিজ্ঞাসাবাদ হয়ে যাওয়ার পরে পালিয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। গুড়াপ থানার পুলিশ অতি তৎপরতার সঙ্গে সিদ্ধেশ্বর মালিককে গ্রেফতার করে এবং তারপর আবার শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। গত ৬-১১-২৫ তারিখে মাননীয় বিচারক সঞ্জয় শর্মা সমস্ত আসামীদের দোষী সাব্যস্ত করেন। তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়। এবং ৭১১-২৫ তারিখে সাজা শোনানোর দিন স্থির করেন। কিন্তু ৭-১১-২৫ তারিখের শাস্তির সুনানিতে মাননীয় বিচারক ঠিক করেন শাস্তির ব্যাপারে আসামীরা যেন সঠিকভাবে তাদের বক্তব্য পেশ করতে পারে। তাই তিনি হুগলি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেন তাদের আলাদাভাবে রাখার। মঙ্গলবার চুঁচুড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক সঞ্জয় কুমার শর্মা অভিযুক্ত আট সিপিআইএম কর্মীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা শোনান।
ছবি: পার্থ রাহা।
