আজকাল ওয়েবডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে বহুতল আবাসনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে কড়া অবস্থান নিল নির্বাচন কমিশন। আর কোনও সময় দেওয়া হবে না। বুধবারের মধ্যেই আটটি জেলার জেলাশাসক বা জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতেই হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা না পড়লে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে কমিশন।

মঙ্গলবার জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে দায়িত্বের কথা স্পষ্ট করে মনে করিয়ে দেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী। নির্বাচন কমিশন আগেই নির্দেশ দিয়েছিল, যেসব বহুতল আবাসনে ২৫০টি পরিবার অথবা ৫০০ জনের বেশি ভোটার রয়েছেন, সেখানে ভোটকেন্দ্র করা সম্ভব কি না, সে বিষয়ে সমীক্ষা করে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। কিন্তু কমিশনের কাছে যে রিপোর্টগুলি জমা পড়েছে, তাতে সন্তুষ্ট নয় কমিশন।

কমিশনের বক্তব্য, জমা পড়া রিপোর্টগুলিতে যথাযথ সমীক্ষার অভাব রয়েছে। সেই কারণেই নতুন করে জেলাশাসকদের উদ্দেশ্যে  বিজ্ঞপ্তি জারি করে নতুন করে নির্দেশ দেওয়া হয়। রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ৩১ ডিসেম্বর।

মঙ্গলবার সকালে রাজ্যে আসেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী। দুপুর সাড়ে ৩টা থেকে সিইও দপ্তরে  টানা সাড়ে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ কুমার আগরওয়ালও।

ওই বৈঠকে কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং হুগলি এই আটটি জেলার জেলাশাসক বা জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ হাজির থাকতে বলা হয়।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, একাধিকবার নির্দেশ দেওয়ার পরেও রিপোর্ট না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার। কেন কমিশনের নির্দেশ মানা হচ্ছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসককে বিশেষ ভাবে ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। ওই জেলা থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা মিলছে না বলেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন জ্ঞানেশ ভারতী।

কমিশনের তরফে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বুধবারের মধ্যেই বহুতল আবাসনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতেই হবে। তা না হলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে নির্বাচন কমিশন।

উল্লেখ্য, গত দু’দশকে কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে বহুতল আবাসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। রাজনৈতিক দলগুলির হিসেব অনুযায়ী, কলকাতায় মোট ভোটারের প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ বহুতল আবাসনের বাসিন্দা। ভোটের দিনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত আশঙ্কা ও আতঙ্কের কারণে এই সব আবাসনের বহু বাসিন্দাই ভোটকেন্দ্রে যেতে অনীহা প্রকাশ করেন।

এর আগে বহুতল আবাসনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে আপত্তি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি লেখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য ছিল, বেসরকারি জায়গায় কী ভাবে ভোটকেন্দ্র করা যায়। ভোটকেন্দ্র হওয়া উচিত সরকারি বা আধা-সরকারি জায়গায়। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ছিল, বহুতল আবাসনে ভোটকেন্দ্র হলে বৈষম্যের সৃষ্টি হতে পারে।

তবে নির্বাচন কমিশনের মত, ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বহুতল আবাসনে পৃথক ভাবে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে।