আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লির লাল কেল্লার কাছে ভয়াবহ গাড়ি-বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যুর মাত্র একদিন পরে কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই) ক্যাম্পাসে পাওয়া গেল সাম্প্রদায়িক ঘৃণামূলক গ্রাফিতি। মঙ্গলবার সকালেই ছাত্ররা দেখতে পান, ছেলেদের হোস্টেল সিভি রমন হলের প্রধান দরজার দুই পাশে লেখা রয়েছে—“Muslims and dogs should not enter the premises” এবং “No dogs and Muslims”. একই ভাষার নোংরা বার্তা পাওয়া যায় হোস্টেলের বিভিন্ন রেলিং, দেয়াল ও একটি ডাস্টবিনেও।
মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ভোরে যারা ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে চা খেতে বাইরে গিয়েছিলেন, তারা কিছুই দেখেননি। কিন্তু সাড়ে সাতটার পর বাইরে বেরোনো ছাত্ররা দরজায় গ্রাফিতি দেখে হতবাক হয়ে যান। ছাত্ররা জানান, জানুয়ারির পরীক্ষা সামনে হওয়ায় অনেকেই রাতভর পড়াশোনা করেন এবং খুব সকালে চা খেতে বের হন। গ্রাফিতি সেই সময়ের মধ্যেই কেউ লিখে গেছে বলেই তাঁদের সন্দেহ।
হোস্টেলের একটি সাধারণ ওয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সকালে ছবিগুলি পোস্ট করা হয়। সেখানে অপরাধীকে এগিয়ে এসে ক্ষমা চাইতে বলা হলেও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
একদল ছাত্র দুপুরে মৌখিক অভিযোগ জানাতে প্রশাসনের কাছে যান। আইএসআই কলকাতার পরিচালক সাংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিন বিশ্বব্রত প্রধান এবং হোস্টেল ওয়ার্ডেন শুভময় মৈত্র ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। পরিচালক প্রকাশ্যে এই কাজের নিন্দা করেন বলে ছাত্ররা জানান। পরবর্তীতে একটি লিখিত অভিযোগও জমা দেওয়া হয়।
ছাত্রদের অভিযোগ, হোস্টেলের সামনে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাওয়া হলে প্রশাসন তা নাকচ করে। যদিও তারা আশ্বাস দেয় যে তদন্ত করা হবে এবং ভবিষ্যতে ছাত্রদের নিয়ে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা যেতে পারে। ছাত্রদের মতে, পরিচালক পরিদর্শনের পরই গ্রাফিতি মুছে ফেলার নির্দেশ দিতে চেয়েছিলেন, যা তাঁরা আপত্তি করেন।
ডিনের সঙ্গে বৈঠক ও নীরবতা নিয়ে ক্ষোভ ছাত্রদের। ১২ নভেম্বর ১০ জনের একটি ছাত্রদল ডিন বিশ্বব্রত প্রধানের সঙ্গে দেখা করেন। ডিন জানান যে জানুয়ারিতে সচেতনতা বিষয়ক সেমিনার করা যেতে পারে এবং হোস্টেল গেটে অতিরিক্ত এক নিরাপত্তারক্ষীও নিয়োগ করা হয়েছে। তবে সঠিক তদন্তের ব্যাপারে তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে পরিচালকের স্তরে।
ডিন প্রতিশ্রুতি দেন যে একটি অফিসিয়াল বিবৃতি প্রকাশ করা হবে। কিন্তু ১২ নভেম্বর রাত পর্যন্ত কোনও বিবৃতি প্রকাশ না হওয়ায় ছাত্রদের একাংশ উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে প্রশাসন বিষয়টি চাপা দিয়ে দিতে পারে। ডিন বিশ্বব্রত প্রধান ঘটনাটি নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। পরিচালক সাংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোনও ধরা যায়নি।
মুসলিম ছাত্রদের প্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে এই বিষয়। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা মুসলিম ছাত্ররা জানান, আগে কখনও তারা ধর্মের কারণে বৈষম্যের শিকার হননি। কেউ কেউ শাস্তির দাবি করলেও, কারও মত, অপরাধীকে পরামর্শ ও কাউন্সেলিং করানো প্রয়োজন।
আইএসআই কলকাতার প্রাক্তন ছাত্র ও সিপিআই(এমএল)-এর সাধারণ সম্পাদক dipankar bhattacharyya বলেন, “এমন মুহূর্তে যখন সরকারও নিশ্চিত নয় বিস্ফোরণ দুর্ঘটনা নাকি সন্ত্রাস, সেখানে উচ্চশিক্ষার এক প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালে এই ধরনের ধর্মবিদ্বেষী বার্তা দেখা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্রিজন সেনগুপ্ত বলেন, “এটি আমাদের সমাজে ছড়িয়ে থাকা বিভাজন ও ঘৃণার বিষাক্ত পরিবেশের প্রতিফলন। প্রশাসনকে কঠোরতা ও সংবেদনশীলতার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।”
ঘৃণামূলক এই ঘটনার ঠিক মাঝেই আইএসআই বিল নিয়ে ক্যাম্পাসে তীব্র বিতর্ক চলছে। অনেকে মনে করছেন, এই বিল আইএসআই-এর প্রশাসনিক ও একাডেমিক স্বাধীনতার উপর আঘাত হানতে পারে। বুধবার ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের বাইরে বিলের প্রতিবাদে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ছাত্রসমাজের দাবি—সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ, স্বচ্ছ তদন্ত, এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা। তবে ঘটনাটি ঘটার 36 ঘণ্টা পরও তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না থাকায় অনেকেই প্রশাসনের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
