আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১৩ ই ডিসেম্বর নামখানা মৎস্য বন্দর থেকে এফবি পারমিতা নামে একটি ট্রলার ১৬ জন মৎস্যজীবীকে নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সময় ভারতীয় এই ট্রলার ভারত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জল সীমানার কাছে পৌঁছে যায়। সেই সময় বাংলাদেশের নৌবাহিনী ভারতীয় এই মৎস্যজীবী ট্রলার কে ধাওয়া করে। বাংলাদেশের নৌবাহিনী তাড়া খেয়ে তড়িঘড়ি ভারতীয় জল সীমানার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল এই ট্রলার। সেই সময় এফবি পারমিতা ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশি জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায় ট্রলারটি। সূত্রের খবর তেমনটি।
এরপর ভারতীয় অন্যান্য মৎস্যজীবী ট্রলার সম্পূর্ণ ঘটনা দেখতে পেয়ে উদ্ধার কাজের জন্য এগিয়ে আসে। এফবি পারমিতা ১৬ জন মৎস্যজীবীদের মধ্যে ১১ জন মৎস্যজীবীদের কে অন্যান্য মৎস্যজীবী ট্রলার উদ্ধার করলেও পাঁচ জন মৎস্যজীবী এখনও নিখোঁজ। নিখোঁজ মৎস্যজীবীর খোঁজে ইতিমধ্যে তল্লাশি চলছে। নিখোঁজ পাঁচ মৎস্যজীবীদের বাড়ি কাকদ্বীপ এলাকায়। নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের খোঁজে কাকদ্বীপ বন্দর থেকে রওনা দিয়েছে মৎস্যজীবীর ট্রলার।

এবিষয়ে সুন্দরবন মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র জানান, 'ভারত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জল সীমানার কাছে ভারতীয় বেশ কিছু মৎস্যজীবী ট্রলার থেকে মাছ ধরছিল । সেই সময় একটি বাংলাদেশের উপকূল রক্ষী বাহিনীর জাহাজ আলো নিভিয়ে সজোরে এসে এফবি পারমিতাকে ধাক্কা মারে। এরপর ১৬ জন মৎস্যজীবী বঙ্গোপসাগরে পড়ে যায়। বাংলাদেশের সেই উপকূল রক্ষী বাহিনীর জাহাজ ভারতীয় মৎস্যজীবীদের উদ্ধার না করে ফিরে যায় বাংলাদেশের জলসীমানার মধ্যে। সেই সময় ভারতীয় অন্যান্য মৎস্যজীবীরা তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১৬ জন মৎস্যজীবীদের মধ্যে ১১ জন মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করে। এখনও পর্যন্ত পাঁচজন মৎস্যজীবী নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ মৎস্যজীবীর খোঁজে চলছে তল্লাশি। নিখোঁজ পাঁচ মৎস্যজীবীদের মধ্যে রয়েছে রাখাল দাস।'
এই ঘটনা সামনে আসায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাখাল দাসের পরিবারের মধ্যে। ঘটনা প্রসঙ্গে রাখাল দাসের মেয়ে রোতি পোদ্দার জানান, 'বাবার সঙ্গে গতকাল কথা হয়েছিল। তারপর আর কথা হয়নি। পরে শুনলাম ১৫ জন মৎস্যজীবী-সহ বাবা যে ট্রলারে গিয়েছিল সেই ট্রলার ডুবে গিয়েছে। ১১ জনকে উদ্ধার করা গেলেও এখনও পর্যন্ত আমার বাবা-সহ পাঁচজন মৎস্যজীবী নিখোঁজ। আমরা খুবই চিন্তায় রয়েছি।'
অন্যদিকে খবর, ভারতীয় জলসীমানা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশি ট্রলার ভারতবর্ষে ঢুকেছে, সেই খবর এক মৎস্যজীবী প্রথম ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর কাছে পৌঁছে দেন। সেই মৎস্যজীবীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী ভারতীয় জল সীমানা লঙ্ঘন করে ভারতে অনুপ্রবেশ করা পাঁচটি ট্রলার আটক করে। সুনীল দাস নামে কাকদ্বীপের ওই মৎস্যজীবীকে ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর তরফ থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। মাছ ধরার সময় বাংলাদেশি ট্রলারগুলিকে দেখতে পেয়ে তিনি উপকূলে খবর পাঠিয়েছিলেন। সুনীল দাস নামের ওই মৎস্যজীবীর প্রশংসায় এখন পঞ্চমুখ সকলেই। সুন্দরবন সামুদ্রিক মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের একজন সদস্য সুনীল।
তাঁর তৎপরতায় উপকূলরক্ষী বাহিনীর হাতে পাঁচটি বাংলাদেশি ফিশিং ট্রলার ভারতে ফিশিং করার সময় ধরা পড়ে। তাঁদের তৎক্ষণাৎ আটক করা হয়। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে আটক থাকা ৪৭ জন মৎস্যজীবীকে দ্রুত ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেছেন সুন্দরবন সামুদ্রিক মৎস্যজীবী ইউনিয়নের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র। তিনি জানিয়েছেন, 'ওঁরা বঙ্গোপসাগরের এই অঞ্চলটাকে ঘরের উঠোনের মতো চেনেন। তাই তাঁদের ইন্ডিয়ান কোস্ট গার্ড চোখ বলে মানে। ইতিমধ্যেই আইসিজি-র কমান্ডেন্ট এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সুনীল দাসকে পুরস্কৃত করেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৎস্যজীবীদের সন্দেহজনক জলযান, সন্দেহজনক ব্যক্তি দেখলেই স্থানীয় থানা, কোস্টগার্ড, মৎস্যজীবী অ্যাসোসিয়েশনে জানাতে বলা হয়েছিল। সুনীল সঠিকভাবে সেই কাজটি করেছেন।'
