মিল্টন সেন, হুগলি: সাদা পোশাক। গলায় তিরঙ্গা ওড়না। একসঙ্গে ১৫০ খুদে কন্ঠ গেয়ে উঠল। মুখরিত হল 'বন্দে মাতরম'। উঠে দাঁড়ালেন উপস্থিত শ্রোতারা। ভায়োলিনের সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে পড়ল মেলা প্রাঙ্গণে। সরস্বতী বন্দনায় নৃত্য পরিবেশন করলেন ছাত্রীরা। সূচনা হল ১৭ তম হুগলি চুঁচুড়া বই মেলার।
"এক সাথে, এক সাথে" স্বার্থক হল বইমেলার ট্যাগ লাইন। বন্দে মাতরম সঙ্গীতের ১৫০ তম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে টেকনো ইন্ডিয়া পাবলিক স্কুল এবং হুগলি চুঁচুড়া বইমেলার অভিনব যৌথ ভাবনাকে শ্রদ্ধা জানালেন উপস্থিত সকলে। শনিবার চুঁচুড়া ময়দানে মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ১৭ বার ঘন্টা বাজিয়ে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপার তথা চুঁচুড়ায় প্রস্তাবিত ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধার ডঃ তন্ময় রায় চৌধুরী।
বিশেষ কারণে শহরে না থাকায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি বইমেলার প্রধান অথিতি সিস্টার নিবেদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা টেকনো ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর কর্ণধার সত্যম রায়চৌধুরী। টেলিফোনে তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকতে পারায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে তিনি হুগলি চুঁচুড়া বইমেলার সাফল্য এবং সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। উপস্থিত ছিলেন বইমেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক বিজয় মুখার্জি, গোপাল চাকী, কার্যকরী সভাপতি ডাঃ অক্ষয় কুমার আঢ্য, টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ পাবলিক স্কুল চুঁচুড়ার অধ্যক্ষ দেবায়ন দত্ত প্রমুখ।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকতে পারেননি মেলা কমিটির সভাপতি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী নরেন দে।এদিন বিকেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে মেলার মূল প্রবেশদ্বার থেকে ব্যান্ড সহযোগে অতিথিদের মেলার মূল মঞ্চে নিয়ে যায় চুঁচুড়া টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ পাবলিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। ফুল ছড়িয়ে চন্দনের টিপ পরিয়ে উপস্থিত অতিথিদের বরণ করে নেওয়া হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চুঁচুড়া টেকনো ইন্ডিয়া পাবলিক স্কুলের খুদে পড়ুয়াদের দেড়শ কন্ঠে 'বন্দে মাতরম' গান অনুষ্ঠানকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেয়।

গানের পরেই শুরু হয় ভায়োলিন বাদন। সঙ্গে ছাত্রীদের সরস্বতী বন্দনার সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। একে একে বরণ করে নেওয়া হয় উপস্থিত অতিথিদের। মূল মঞ্চ থেকে উপস্থিত অতিথিদের হাত ধরে প্রকাশিত হয় সমকাল ও বিবৃতি পত্রিকার ৫৩তম বইমেলা সংস্করণ। উদ্বোধনী ভাষণের পর অনুষ্ঠিত হয় মেধা-বৃত্তি প্রদান ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
বইমেলায় রয়েছে কলকাতা-সহ রাজ্যের নামীদামি প্রকাশনা সংস্থার বইয়ের ১২০টি স্টল। উদ্বোধক তন্ময় রায় চৌধুরী বলেছেন, এই বইমেলার সূচনা পর্বে তিনি ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে মেলার ব্যাপ্তি ঘটেছে। আগের তুলনায় পাঠকের ভিড়ও বেড়েছে কয়েকগুণ। মানুষের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা কমছে, এই কথা ঠিক নয়। তিনি আশাবাদী মানুষের মধ্যে বই পড়ার এই প্রবণতা আগামীদিনে আরও বাড়বে।
মেলা প্রসঙ্গে বইমেলার যুগ্ম সম্পাদক গোপাল চাকী বলেন, এই বছর বেড়েছে স্টলের সংখ্যা। তিনি আশা করছেন বইয়ের বিক্রি বিগত বছরের তুলনায় কয়েক গুণ বাড়বে। ইতিমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রা পঞ্চাশ লক্ষ টাকা অতিক্রম করেছে। এবারে পঞ্চান্ন লক্ষ টাকার বই বিক্রি করে রেকর্ড গড়বে।' তিনি দাবি করেন সামগ্রিকভাবে কলকাতা বইমেলার পরই রাজ্যের অন্যতম বইমেলা হয়ে ওঠার লক্ষ্যে অনেকটাই এগিয়েছে হুগলি চুঁচুড়া বইমেলা।
