আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্ত্রীর সঙ্গে গ্রামেরই এক পুরুষের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। এই সন্দেহ থেকে ভয়াবহ পরিণতি হল মহিলার। স্ত্রীকে মাথা থেঁতলে খুন করে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হলেন এক যুবক।

বৃহস্পতিবার বিকেলে মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার অন্তর্গত ঝিকরহাটি গ্রামে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত যুবকের নাম সাহেব লেট (২৫) এবং তার স্ত্রীর নাম রমা লেট (১৯)।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় তাদের দু’বছরের কন্যাসন্তান বাড়িতে না থাকায়, সে প্রাণে বেঁচে যায়। ঘটনার খবর পেয়ে বড়ঞা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে মৃতদেহ উদ্ধার করে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক কলহ এবং স্ত্রীর পরকীয়ার সন্দেহ থেকেই এই মর্মান্তিক পরিণতি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় দিনমজুর সাহেব প্রায় চার বছর আগে রমাকে ভালবেসে বিয়ে করেন। 

কিন্তু স্ত্রীকে বিয়ে করে ঘরে আনলেও সংসারে শান্তি ছিল না। প্রায় প্রতিদিনই সাহেব মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরতেন এবং নিজের স্ত্রী, বাবা-মা, এমনকি ছোট কন্যাকেও মারধর করতেন।

ক্রমাগত নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে প্রায় সাত মাস আগে সাহেবের বাবা-মা গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় গিয়ে কাজ শুরু করেন। মেয়েকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে রমা কিছুদিন আগে শিশুটিকে মামার বাড়িতে রেখে আসেন।

গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, গত সোমবারও সাহেব মদ্যপ অবস্থায় রমাকে বেধড়ক মারধর করে। রমা তখনই বাবার বাড়ি চলে যান এবং বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। পরে সাহেব সাইকেল নিয়ে রমার বাবার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে বোঝান এবং দুপুর নাগাদ ঘরে ফিরিয়ে আনেন।

রমার দাদা শ্বশুর দেবু লেট বলেন, ‘সাহেবের অত্যাচারে ওর বাবা-মা থেকে শুরু করে সবাই ভয় পেত। বৃহস্পতিবার রমাকে নিয়ে যাওয়ার এক ঘণ্টা পর যখন আমরা খবর নিতে যাই, দেখি ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। অনেক ডাকাডাকির পরও কোনও সাড়া না মেলায় দরজা ভেঙে দেখি, সাহেব গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে আর রমার রক্তাক্ত দেহ মেঝেতে পড়ে আছে।’

পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, বাড়ি ফেরার পর ফের ঝগড়া শুরু হয় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে। বচসা থেকে পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হলে তা ফের হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছায়। সেই সময় সাহেব ঘরের শিলনোড়া দিয়ে স্ত্রীর মাথায় আঘাত করে খুন করে এবং পরে নিজেও গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়। গ্রামজুড়ে এখন শোকের ছায়া। স্থানীয়দের কথায়, ‘প্রায়ই ঝগড়া চলত। কিন্তু এমন মর্মান্তিক পরিণতি হবে তা কেউই ভাবতে পারেনি।’