আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রায় তিন মাস পর অবশেষে মুক্তি পেলেন ভারতীয় মৎস্যজীবীরা। বাংলাদেশের জেলে বন্দি ছিলেন ভারতের ৪৮ জন মৎস্যজীবী। তাঁদের মধ্যে বাবলু দাস নামে এক মৎস্যজীবীর জেলবন্দি থাকাকালীন মৃত্যু হয়। আটক ভারতীয় মৎস্যজীবীদের দেশে ফেরানোর জন্য তৎপর হয় রাজ্য মৎস্য দপ্তর, জেলা প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় সরকার। তিন মাসের আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে ভারতের ৪৭ জন মৎস্যজীবী মুক্তি পেলেন।
বুধবার দুপুরে মুক্তি পাওয়া ভারতীয় মৎস্যজীবীদের নিয়ে আসা হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফ্রেজারগঞ্জ উপকূল থানাতে। এঁদের সকলের বিরুদ্ধেই ছিল ভারত–বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জলসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ। সেই অভিযোগেই তিনটি ট্রলার–সহ মোট ৪৮ জনকে আটক করে বাংলাদেশের উপকূলরক্ষী বাহিনী। এরপর থেকে তাঁরা বাংলাদেশের জেলে বন্দি ছিলেন। যদিও বহু বাংলাদেশি ট্রলারের বিরুদ্ধেও ভারত–বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জলসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। জেলবন্দি ভারতীয় মৎস্যজীবীদের মুক্তির দাবিতে ভারত বাংলাদেশকে উদ্যোগ নিতে বলে। কূটনৈতিক স্তরে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়।
এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক জলসীমা লঙ্ঘন করে ভারতে ঢুকে পড়া আটক ৩২ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে মুক্তি দেয় ভারত। শেষপর্যন্ত ভারতীয় মৎস্যজীবীদের মুক্তি দেয় বাংলাদেশ। মুক্তি পেয়ে দেশে ফেরার পর আনন্দে সঙ্গীদের সঙ্গে নেচে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ করেন ভারতীয় মৎস্যজীবীরা। সেই সঙ্গে দেশে ফিরে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ভারতীয় মৎস্যজীবীরা। পারমিতা নামে একটি ট্রলারের মৎস্যজীবী, গোবিন্দ দাসের অভিযোগ, বাংলাদেশের উপকূলরক্ষী বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর তাঁদের উপর নির্মম অত্যাচার করা হয়েছে। বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। ভারতীয় মৎস্যজীবীরা শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছিলেন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। এই বিষয়ে সুন্দরবন মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র বলেন, ‘অবশেষে মিলেছে স্বস্তি। দীর্ঘ তিন মাসের আইনি লড়াইয়ের পর বাংলাদেশের জেলে বন্দি থাকা ভারতীয় ৪৭ জন মৎস্যজীবীকে মুক্তি দেয় বাংলাদেশ সরকার। ইতিমধ্যেই ভারতীয় মৎস্যজীবীদের উপকূলে নিয়ে আসা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে ৩২ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আরও সচেতনতা বাড়ানো হবে।’
রাজ্যের সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা জানান, ‘প্রতিবছর ভারতীয় মৎস্যজীবীরা মাছ ধরার সময় যান্ত্রিক গোলযোগ কিংবা দিক নির্ণয় ঠিকঠাক করতে না পেরে বাংলাদেশের জল সীমানার মধ্যে ঢুকে পড়েন। এর ফলে বাংলাদেশের উপকূলরক্ষী আটক করে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের। যেমন বাংলাদেশের উপকূলরক্ষী বাহিনী ভারতীয় দুটি ট্রলার–সহ ৪৮ জন মৎস্যজীবীকে আটক করেছিল। এরপর দুই দেশের কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা করার পর ভারতীয় ৪৭ জন মৎস্যজীবীকে মুক্ত করে বাংলাদেশ সরকার। একজন জেলেই মারা গিয়েছেন। দীর্ঘ তিন মাস পর পরিবারের কাছে ফিরে এসে আনন্দে উচ্ছসিত মৎস্যজীবী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।’
