আজকাল ওয়েবডেস্ক: আলোয় উদ্ভাসিত হল সুন্দরবনের এই অঞ্চল। স্বাধীনতার ৭৭ বছর পর রাস্তায় জ্বললো স্ট্রিট লাইট। যা দেখে আনন্দিত কুলতলির বাসিন্দারা বলছেন, স্বপ্ন অবশেষে সত্যি হল। রাস্তায় চলতে আর ভয় পেতে হবে না। আত্মীয়-স্বজন এলেও তাঁদেরকে সন্ধ্যা নামার আগেই চলে যেতে হবে না।
জানা গিয়েছে, আশেপাশের অন্যান্য এলাকায় যখন দোকানের আলোর সঙ্গে রাস্তার আলো মিলেমিশে একাকার হয়ে লুটোপুটি খাচ্ছে তখন এই এলাকায় অন্ধকার যেন জাঁকিয়ে বসেছে। যার জন্য ভয়ে রাস্তায় কেউ বেরতে চাইতেন না। বিশেষ করে মহিলাদের সমস্যা ছিল খুবই বেশি। তাঁরা সন্ধ্যা নামলেই নিজেদের ঘরবন্দি করে ফেলতেন। পড়তে গিয়ে যতক্ষণ না পর্যন্ত ছাত্রীরা ঘরে ফিরে আসতেন ততক্ষণ রীতিমতো আতঙ্কে থাকতে হত মায়েদের। স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণা হালদার বলেন, 'আমরা ভাবতেই পারিনি সুন্দরবনের রাস্তায় এমনভাবে আলো জ্বলবে। কলকাতায় গিয়ে আলো দেখতাম। আফশোস হত, কেন আমাদের এলাকায় এমন আলো নেই? এইরকম যে সত্যি সত্যি কোনোদিন হবে সেটা ভাবতেও পারিনি!' আরেক বাসিন্দা ভগবতী দাস জানান, 'মেয়েরা টিউশন থেকে ফিরতে ভয় পেত। আমরাও ভয়ে ভয়ে থাকতাম। দরজার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনতাম। এখন রাস্তায় আলোয় ভরে গিয়েছে। আমরা অনেকটাই নিশ্চিন্ত। আমাদের নিরাপত্তা অনেকটাই বেড়ে গেল।'

উচ্ছাস গোপন করেননি এই এলাকার পুরুষ বাসিন্দারাও। ঝলমলে আলোর দিকে তাকিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বনাথ রায় বলেন, রাত হলেই শুরু হত সমস্যা। ঠিকভাবে চলাচল করা যেত না। কিছু দেখাই যেত না।সামনে যদি কেউ এসে দাঁড়িয়েও থাকত তাও বোঝা যেত না। ভয় লাগত এই বুঝি কারুর খপ্পরে পড়ি। সেই সমস্যাটা কাটল। এখন অনেকটাই সুবিধা হচ্ছে।' যেহেতু এলাকায় রাস্তা থাকত অন্ধকার সেজন্য বাসিন্দাদের মনে সবসময়ই ভয় ছিল এই বুঝি চোর এসে চুরি করে বা অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে কেউ ছিনতাই করে চম্পট দেয়। এই আশঙ্কা গোপনও করেননি তাঁরা। আখতার গায়েন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, 'সবসময় ভয় পেতাম এই বুঝি চুরি বা ছিনতাই হয়। এখন আলো আসায় সেই ভয় অনেকখানি দূর হয়েছে।'
আরও পড়ুন: ‘দু’জনে বিয়ে দিতে হবে, নইলে তোঁদের মেরে আমিও...”, মধ্যরাতে মেয়ের প্রেমিকের মাকে গিয়ে হুমকি বাবার
রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগে সকলেই খুশি। তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়িত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে কুলতলির বিধায়ক গণেশচন্দ্র মণ্ডল বলেন, '২০১১ সালের পর থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে গোটা রাজ্য জুড়েই চলছে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। কুলতলিতে তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। আগামীদিনে আরও কাজ হবে। আরও বেশি বেশি উন্নয়ন করা হবে।' আলোয় ভরা এই নতুন সূর্য শুধু কুলতলিতেই উঠল না, বরং সুন্দরবনের মতো পিছিয়ে থাকা এলাকার উন্নয়নের আশা বলেই মনে করছেন সকলে।
