আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফের একবার মুর্শিদাবাদ জেলায় খুন হলেন এক তৃণমূল সমর্থক। পুরনো বিবাদের জেরে এক তৃণমূল সমর্থককে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল কিছু বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। গত একুশে জুলাই ওই তৃণমূল সমর্থককে মারধরের ঘটনাটি ঘটে রেজিনগর থানার অন্তর্গত আন্দুলবেড়িয়া এলাকায়।
গুরুতর আহত অবস্থায় ওই তৃণমূল কর্মী প্রতীপ পালকে (৪৩) মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে সেদিনই ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন শুক্রবার গভীর রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রসঙ্গত, মাত্র তিনদিন আগে ভরতপুর থানার একটি গ্রামে রাতের অন্ধকারে এক তৃণমূল কর্মী বাড়ি ফেরার সময় তাঁকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে কিছু দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: জীবন্ত মায়ের গায়ে আগুন দিয়ে বিছানায় বসে পুড়তে দেখল ছেলে, হাড়হিম হত্যাকাণ্ডে চমকে উঠলেন সকলে
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় টোটো চালক প্রতীপ পাল গত ২১ তারিখ কয়েকজন যাত্রীকে নিয়ে গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় আন্দুলবেড়িয়া কলোনি এলাকার কয়েকজন যুবক তাঁকে বন্দুক দেখিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
মৃত যুবকের এক কাকা চন্দ্রকান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘আমার ভাইপোকে যখন অপহরণ করা হয় সেই সময়ে টোটোতে বেশ কয়েকজন যাত্রী ছিলেন। সকলের সামনেই প্রতীপকে বন্দুক দেখিয়ে মারধর করে আন্দুলবেড়িয়া কলোনির একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘সেই বাড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে প্রতীপকে বন্দুক দিয়ে ফের এক প্রস্থ মারধর করা হয়। সেই সময় তাঁর আর্ত চিৎকার শুনে পাশের বাড়ির কয়েকজন মহিলা প্রতীপকে উদ্ধার করেন। এরপর অন্যান্য গ্রামবাসীরা খবর পেয়ে তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসে ভর্তি করেন। সেখানেই গত কয়েকদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।’
চন্দ্রকান্তবাবু বলেন, ‘গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে গ্রামে একটি মারধরের ঘটনা ঘটে। সেই সময় প্রতীপকে কিছু বিজেপি কর্মী প্রচণ্ড মারধর করেছিল। সেই ঘটনায় সাগর নামে এক যুবক–সহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে রেজিনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি সাগর কোনও একটি সরকারি চাকরি পেয়েছে। কিন্তু পুলিশের খাতায় তার নাম থাকার কারণে ‘পুলিশ ভেরিফিকেশনে’ আটকে যাওয়ায় সাগর সেই চাকরি পাচ্ছিল না। এই কারণে ওই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য সাগর এবং তার পরিবারের তরফ থেকে প্রতীপকে বেশ কয়েকবার প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।’
চন্দ্রকান্তবাবু আরও অভিযোগ করেন, ‘আমরা যে গ্রামে থাকি সেখানকার প্রায় সমস্ত বুথেই বিজেপি প্রার্থীরা গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। আমরা মাত্র কয়েকটি পরিবার তৃণমূল কংগ্রেস করছি। আমাদেরকে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য একাধিকবার চাপ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা তাতে রাজি হইনি।’
তাঁর অভিযোগ, ‘বিজেপিতে যোগ না দেওয়া এবং ওই মামলা তুলে না নেওয়ার জন্য সাগর এবং অন্য বেশ কয়েকজন বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতী ২১ তারিখ প্রতীপকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। এর ফলেই মৃত্যু হয়েছে আমার ভাইপোর।’ যদিও রেজিনগরের তৃণমূল বিধায়ক রবিউল আলম চৌধুরী এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও প্রত্যক্ষ যোগ নেই বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই যুবক এবং তার পরিবার তৃণমূল কংগ্রেস করতে পারে। তবে এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সক্রিয় যোগ রয়েছে বলে আমার জানা নেই।’
প্রায় একই কথা বলেছেন বিজেপির বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মলয় মহাজন। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। আমি নিজের দলের স্থানীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে গোটা বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিয়েছি। সম্পূর্ণ পারিবারিক কারণে এই হামলার ঘটনা ঘটেছিল।’
রেজিনগর থানার এক আধিকারিক জানান, ওই ব্যক্তির উপর হামলার ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে কয়েক জনের নামে ২৩ তারিখে একটি মামলা রুজু হয়েছে। তবে অভিযুক্তরা বর্তমানে পলাতক।
