আজকাল ওয়েবডেস্ক:  যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক সম্প্রসারণের সুযোগ দেখছে, তবে তা কখনোই ভারতের সঙ্গে তাদের ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষতির কারণ হবে না — এমনটাই জানালেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। রুবিও সোমবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বাড়ানোর সুযোগ দেখছি। তবে ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব গভীর, ঐতিহাসিক এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ — সেটি কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।”

এক প্রশ্নের জবাবে রুবিও বলেন, “ভারত এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন, সেটি স্বাভাবিক। কিন্তু আমি মনে করি তারা পররাষ্ট্রনীতিতে অত্যন্ত পরিপক্ব। দেখুন, তাদেরও এমন কিছু দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে যাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই। এটা এক ধরনের বাস্তববাদী ও পরিণত কূটনীতি।” তিনি আরও বলেন, “আমাদেরও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হয়। এটা আন্তর্জাতিক কৌশলগত বাস্তবতার অংশ।”

রুবিওর মালয়েশিয়া সফরের আগে ভারতের রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি বাণিজ্য নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এর জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “নয়াদিল্লি ইতিমধ্যেই তাদের তেল আমদানির উৎস বৈচিত্র্য করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।” তিনি বলেন, “যদি তারা তাদের তেলের উৎস বৈচিত্র্য করে, তাহলে কিছু আমাদের কাছ থেকেও কিনবে, কিছু অন্য দেশ থেকেও। আমি বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় জড়িত নই, তাই আগাম কিছু বলব না। তবে আমি জানি, তারা বহুদিন ধরেই তাদের জ্বালানি আমদানির পরিধি বাড়াতে চায়।”

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার দুটি বড় তেল রপ্তানিকারক সংস্থা রসনেফট (Rosneft) ও লুকয়েল (Lukoil)-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর ফলে ভারতীয় রিফাইনারিগুলির রুশ তেল আমদানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রুবিও বলেন, “আমাদের ও ভারতের মধ্যে আরও বিস্তৃত বাণিজ্যিক বিষয় রয়েছে। তারা সবসময়ই আমাদের মিত্র ও বন্ধু থাকবে।” গত কয়েক মাসে ভারত-আমেরিকা সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে রুশ তেল আমদানি ও মার্কিন শুল্ক নীতি নিয়ে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের রুশ তেল কেনার ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক এবং ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ আরোপ করেছেন, যা নয়াদিল্লি “অন্যায়, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য” বলে বর্ণনা করেছে। এরপর ট্রাম্প দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নাকি তাঁকে জানিয়েছেন যে ভারত রুশ তেল কেনা বন্ধ করবে। তবে ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়, “এমন কোনও আলোচনা হয়নি।”

আরও পড়ুন: পাকিস্তানের কোনও নতুন চাল! ঢাকায় ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাতে কী কথা হল শীর্ষ পাক সেনাকর্তার?

গত ছয় মাসে মার্কিন-পাকিস্তান সম্পর্কেও দৃশ্যমান উষ্ণতা এসেছে। বিশেষ করে মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের পর যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তখন থেকে দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও কৌশলগত যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। পাকিস্তান দাবি করেছে, দুই দেশের মধ্যে সংঘাত থামাতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতাই মূল ভূমিকা পালন করেছে, যদিও ভারত এ দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে।

সবশেষে রুবিও বলেন, “আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন মাত্রায় কাজ করতে পারি, কিন্তু ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি অনেক গভীর ও ঐতিহাসিক। সেটা কোনোভাবেই ক্ষুণ্ণ হবে না।” তিনি আরও যোগ করেন, “ভারত আমাদের জন্য এক নির্ভরযোগ্য অংশীদার, এবং এই বন্ধুত্ব ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কো রুবিওর এই বক্তব্য আসলে যুক্তরাষ্ট্রের ভারত ও পাকিস্তান–উভয়ের সঙ্গেই ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার কূটনৈতিক বার্তা। একদিকে রুশ জ্বালানি নির্ভরতা কমাতে ভারতের প্রতি আহ্বান, অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন কৌশলগত উপস্থিতি পুনর্গঠনের ইঙ্গিত—সব মিলিয়ে, এই সফরকে ইন্দো-আমেরিকান সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।