আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বের অনেক দেশ যখন এখনও মহাকাশ প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান খুঁজছে, তখন ইউরোপের এক ছোট্ট দেশ লুক্সেমবার্গ নীরবে কিন্তু দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এক নতুন দিগন্তের পথে। আয়তনে মাত্র ২,৫৮৬ বর্গকিলোমিটার, যা প্রায় দিল্লি এনসিআরের সমান, সেই দেশ আজ মহাকাশ অর্থনীতির অন্যতম প্রধান হিসেবে উঠে এসেছে।


২০১৭ সালে লুক্সেমবার্গ ইতিহাস সৃষ্টি করে। দেশটি এমন এক অভিনব আইন পাশ করে, যার মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রহাণু থেকে আহরিত সম্পদের মালিকানা ও বিক্রির অধিকার দেওয়া হয়। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে লুক্সেমবার্গ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মতো শক্তিধর দেশগুলোকেও পেছনে ফেলে প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে মহাকাশ খননের আনুষ্ঠানিক আইনি কাঠামো তৈরি করে। এই আইন শুধু প্রতীকী ছিল না, বরং বাস্তব বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।


লুক্সেমবার্গ বিশ্বের অন্যতম আর্থিক কেন্দ্র। দেশটি বর্তমানে ৬ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি গ্লোবাল সম্পদ পরিচালনা করে। এবার সেই আর্থিক সক্ষমতাকেই তারা মহাকাশ অর্থনীতির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। সরকার ইতিমধ্যে ২০০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি বিনিয়োগ করেছে এমন স্টার্টআপ কোম্পানিতে, যারা কাজ করছে মহাকাশ অনুসন্ধান, খনিজ আহরণ, ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি নিয়ে।

আরও পড়ুন: বিশ্বের সাতটি বৃহত্তম মেট্রো নেটওয়ার্ক, ভারতের স্থান কোথায়


বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে গ্রহাণুগুলি হতে পারে প্লাটিনাম, কোবাল্ট, নিকেল-এর মতো মূল্যবান ধাতুর বিশাল উৎস, যার বাজারমূল্য ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। লুক্সেমবার্গের লক্ষ্য হল নিজেদেরকে মহাকাশের সুইৎজারল্যান্ড করে তোলা। এমন এক কেন্দ্র যেখানে স্পেস মাইনিং কোম্পানিগুলি থাকবে। 


লুক্সেমবার্গের প্রো-স্পেস নীতি ও কর সুবিধা আকর্ষণ করেছে বিশ্বজুড়ে উদ্ভাবনী কোম্পানিগুলোকে। লুক্সেমবার্গ ইতিমধ্যে নাসা, ইএসএ এবং জেএএক্সএ -এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে মহাকাশ সম্পদ ব্যবহারে সহযোগিতার লক্ষ্যে। এভাবেই একটি ক্ষুদ্র ইউরোপীয় দেশ আজ আন্তর্জাতিক মহাকাশ নীতিনির্ধারণের কূটনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে যেখানে বড় বড় দেশগুলোও এখনও স্পষ্ট নীতি নির্ধারণে পিছিয়ে আছে।


মাত্র কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটারের ছোট এই দেশ আজ প্রমাণ করছে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় আকার নয়, দৃষ্টি ও সাহসই আসল শক্তি। লুক্সেমবার্গের গ্রহাণু খনন নীতি ইতিমধ্যেই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলিকে, যারা নিজেদেরও অনুরূপ আইন প্রণয়নে আগ্রহী।


লুক্সেমবার্গের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য শুধু মহাকাশে উপস্থিতি নয়, বরং এমন এক অর্থনীতি গড়ে তোলা যা পৃথিবীর বাইরের সম্পদে টিকে থাকবে। যদি তাদের এই প্রচেষ্টা সফল হয়, তাহলে একদিন এই ক্ষুদ্র দেশটি হয়ে উঠতে পারে পৃথিবী নয়, মহাকাশেও মাথাপিছু সবচেয়ে ধনী দেশ। লুক্সেমবার্গের গল্প আজ এক বাস্তব প্রমাণ — ভবিষ্যতের দৌড়ে ছোট দেশও হতে পারে বড় নেতৃত্বের প্রতীক।