আজকাল ওয়েবডেস্ক: একসময় পাইরেসির বিকল্প হিসেবে যেসব স্ট্রিমিং সার্ভিসের জন্ম হয়েছিল যেমন নেটফ্লিক্স, ডিজনি+ বা অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও আজ সেই প্ল্যাটফর্মগুলিই পরোক্ষভাবে মানুষকে আবার অবৈধ কনটেন্ট ডাউনলোডের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
প্রায় এক দশক আগে পর্যন্ত টরেন্ট ও অনলাইন পাইরেসি ছিল সিনেমা ও সিরিজ দেখার প্রধান অবৈধ উপায়। কিন্তু স্ট্রিমিং পরিষেবাগুলি আসার পর মানুষ সহজ, সাশ্রয়ী ও বৈধ উপায়ে কনটেন্ট পেতে শুরু করে। ফলে পাইরেসির হার দ্রুত কমে যায়। কিন্তু গত পাঁচ বছরে পরিস্থিতি উল্টো হয়েছে — পাইরেসি আবারও পুরনো গতিতে ফিরছে।
বর্তমানে প্রায় প্রতিটি বড় স্ট্রিমিং সার্ভিস তাদের সাবস্ক্রিপশন ফি বাড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, পাসওয়ার্ড শেয়ারিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর নিয়ম, আঞ্চলিকভাবে বিভক্ত কনটেন্ট এবং একাধিক প্ল্যাটফর্মে জনপ্রিয় সিরিজ ছড়িয়ে পড়ার কারণে দর্শককে একসঙ্গে একাধিক সার্ভিসে সাবস্ক্রাইব করতে হচ্ছে।
ফলে মাসিক খরচ অনেকের ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ১০০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছে গেছে যা অতীতের কেবল টিভির বিলের চেয়েও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে আবার অবৈধ টরেন্ট বা পাইরেসি সাইটে ঝুঁকছেন, যাতে বিনা খরচে বিজ্ঞাপনমুক্তভাবে পছন্দের সিনেমা ও সিরিজ দেখা যায়।
আরও পড়ুন: পৃথিবী হবে ‘আগুনের বল’, কেন বলেছিলেন হকিং
অ্যান্টি-পাইরেসি সংস্থা MUSO-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০ সালে যেখানে অনলাইন পাইরেসি সাইটে ভিজিট ছিল প্রায় ১০৪ বিলিয়ন, সেখানে ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২১৬ বিলিয়নেরও বেশি — মাত্র চার বছরে ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি। এর মধ্যে সিনেমা ও টিভি কনটেন্টের পাইরেসিই সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।
২০২৩ সালের রিপোর্ট আরও বলছে, বছরে গড়ে ২২৯ বিলিয়নের বেশি বার মানুষ পাইরেটেড ভিডিও কনটেন্টে প্রবেশ করছে। এর ফলে বিনোদন শিল্প প্রতিবছর দশ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত ক্ষতির মুখে পড়ছে, যা প্রযোজনা, বিপণন, এমনকি কর্মসংস্থানেও প্রভাব ফেলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনকার দর্শকরা এক ধরনের “স্ট্রিমিং ফ্যাটিগ” বা মানসিক ক্লান্তিতে ভুগছেন। একাধিক অ্যাপ, বিভিন্ন সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান, অঞ্চলভিত্তিক সীমাবদ্ধতা, এবং বাড়তে থাকা বিজ্ঞাপন—সব মিলিয়ে মানুষ হারাচ্ছে আগ্রহ।
নেটফ্লিক্স, ডিজনি+, এইচবিও ম্যাক্স বা হুলু — প্রত্যেকেই এখন বিজ্ঞাপনসহ সস্তা প্ল্যান চালু করেছে। কিন্তু অভিযোগ উঠছে, “অ্যাড-ফ্রি” প্ল্যানেও ধীরে ধীরে বিজ্ঞাপন ঢুকে পড়ছে। দর্শকরা বলছেন, তারা যে সুবিধার জন্য পাইরেসি ছেড়েছিলেন, সেই সুবিধাই এখন হারিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছে যে অনেক ব্যবহারকারী এখন একই সঙ্গে বৈধ স্ট্রিমিং সাবস্ক্রিপশন রাখছেন এবং অবৈধ পাইরেসি সাইট থেকেও কনটেন্ট ডাউনলোড করছেন। অর্থাৎ, তারা সুবিধা ও খরচের ভারসাম্য রাখার জন্য দুই জগতের মিশ্র সংস্করণ বেছে নিয়েছেন।
উত্তর ইউরোপের সুইডেনে করা এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ খোলাখুলিভাবে স্বীকার করেছেন যে তারা নিয়মিত টরেন্ট ব্যবহার করেন। তাদের মতে, বর্তমান স্ট্রিমিং পরিষেবা এখন “কেবল টিভি ২.০” ছাড়া কিছু নয়।
একসময় যে স্ট্রিমিং বিপ্লব মানুষকে পাইরেসি থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল, আজ সেটিই তাদের আবার সেই পুরনো পথে ফিরিয়ে নিচ্ছে। ব্যয়বহুল প্ল্যান, বিভক্ত কনটেন্ট, ও বিজ্ঞাপনভিত্তিক পরিষেবার কারণে মানুষ ক্রমে মনে করছে — “বিনামূল্যে দেখা ভালো, অন্তত পছন্দটা নিজের মতো করে করা যায়।”
