রাত পোহালেই বিশ্বকর্মা পুজো। আর বিশ্বকর্মা তথা দেবশিল্পীর পুজো মানেই দুর্গাপুজোর ফাইনাল কাউন্টডাউন শুরু। এদিন ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসবও।কিন্তু ঘুড়ি তো বছরের যে কোনও সময় ওড়ানো যায়, তাহলে এই দিনেই কেন? বিশ্বকর্মা পুজোর সঙ্গে ঘুড়ি ওড়ানোর কী সম্পর্ক? এই উত্তর পেতে হলে পৌরাণিক কাহিনির দিকে নজর দিতে হবে।

পুরাণ মতে, বিশ্বকর্মা হলেন দেবতাদের ইঞ্জিনিয়ার। স্বর্গে দেবতাদের যে কোনও রকম কারিগরী সহায়তার দরকার পড়লেই, মুশকিল আসান একমাত্র বিশ্বকর্মা। আর এই বিশ্বকর্মাই একবার দেবতাদের জন্য উড়ন্ত রথ তৈরি করেছিলেন। শোনা যায়, সেই ঘটনাকে স্মরণ করে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ঘুড়ি ওড়ানো হয়। যদিও বাংলায় অবশ্য ঘুড়ি ওড়ানোর প্রচলন শুরু হয় ১৮৫০ সালে। সেই সময় আমজনতা খুব একটা ঘুড়ি ওড়াতেন না। শুধু ধনী ও বিত্তশালী মানুষজনেদের মধ্যেই ঘুড়ি ওড়ানোর চল ছিল। কথিত আছে, বর্ধমান রাজবাড়িতেও ঘুড়ি ওড়ানোর চল ছিল। রাজা মহতাবচাঁদ নাকি নিজেই ঘুড়ি ওড়াতেন। বর্ধমানের রাজারা এসেছিলেন পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে। সেখানে ঘুড়ি উৎসব বেশ জনপ্রিয়। বর্ধমানের রাজাদের হাত ধরেই বর্ধমানে ঘুড়ি উৎসবের সূচনা বলে মনে করা হয়।

আরও পড়ুনঃ শনি-বুধের প্রতিযুতি রাজযোগে কাঁপবে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড! তিন রাশির ভাগ্যে বিরাট বদল, পুজোর আগে কোটিপতি হওয়ার সুযোগ

আবার শোনা যায়, ১৮৫৬ সালে লখনৌ শহরের রাজত্ব খুইয়ে, ইংরেজদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কলকাতায় এসেছিলেন ওয়াজেদ আলি শাহ। কলকাতার বিচালিঘাটে এসে নামেন তিনি। এরপরে মেটিয়াব্রুজ এলাকায় গড়ে তোলেন তাঁর বাড়ি। তার সঙ্গে সঙ্গেই ঘুড়ির লড়াই পাড়ি দেয় কলকাতায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বহু বছর ধরেই ঘুড়ি ওড়ানোর চল ছিল। ওয়াজেদ আলি শাহ কলকাতায় এসে পৌঁছোনোর আগে এখানে সেভাবে ঘুড়ি ওড়ানোর চল ছিল না। তাঁর হাত ধরেই সেই সংস্কৃতিও এসে পড়ে কলকাতায়। 

তারপর থেকেই কলকাতার আকাশে বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ির দেখা মিলতে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে একাধিক বিষয়ে আধুনিকতা প্রবেশ করলেও এত বছর পর ঘুড়ি ওড়ানোর চল সেই একই রকম রয়েছে। যদিও আগের তুলনায় এখন আকাশে খুবই কম সংখ্যক ঘুড়ি দেখা যায়। তবে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন গোটা আকাশ ছেয়ে যায় রঙ-বেরঙের ঘুরিতে। আগামীকাল সব বাড়ির ছাদ থেকে ভেসে আসুক ভো-কাট্টা রব।