আজকাল ওয়েবডেস্ক: বণ্যপ্রাণী, পোকামাকড়ের কামড় থেকে যে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে, তার অগণিত প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু মানুষের কামড়ে কী পরিণতি হয়? অনেকেই বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দেন না। কিন্তু মানুষের কামড়েই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন এক বৃদ্ধ। যা শুরুতে চিকিৎসকদের ছোটখাটো চোট মনে হলেও, ক্রমেই গুরুতর আকার ধারণ করে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। এক বছর আগে ওই শহরেই এক ৬০ বছর বয়সি বৃদ্ধকে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। ওই শহরেই এক দোকান রয়েছে বৃদ্ধের। আচমকা একদিন দুই যুবক চুরির উদ্দেশ্যে দোকানে ঢুকে পড়ে। বাধা দিতে গেলেই বৃদ্ধের উপর চড়াও হয় তারা। মারধর করা হয় তাঁকে। তারপরেও বৃদ্ধ আটকাতে গেলে, তাঁর এক হাতে কামড়ে দেয় এক যুবক। তারপরেই পালিয়ে যায় তারা।
হাতের সেই চোট নিয়ে স্থানীয় এক ক্লিনিকে গিয়েছিলেন বৃদ্ধ। চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন, এটি সামান্য চোট। কোনও গুরুতর কিছু নয়। ফলে চিন্তার কারণ নেই। প্রাথমিক চিকিৎসার পর বৃদ্ধকে ছেড়েও দেওয়া হয়। এরপর কয়েক মাসে বৃদ্ধের হাত সেরে উঠছিল। ঠিক তিন মাস পরেই ভয়ঙ্কর ঘটনাটি ঘটে। সেই 'ছোটখাটো' চোট গুরুতর আকার নেয়। স্বাস্থ্যের অবনতি হয় আরও।
আরও পড়ুন: নেই হেলমেট, চলন্ত বাইকে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ল তিনজন! হাইওয়ের ভিডিও ভাইরাল হতেই রেগে লাল পুলিশ
বৃদ্ধ জানিয়েছেন, তিন মাস পর তাঁর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। তীব্র জ্বরের পাশাপাশি কাঁপুনি, পাশাপাশি সেই হাতটিও ক্রমেই ফুলে যেতে শুরু করে। সেই অবস্থায় বৃদ্ধকে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা পরীক্ষানিরীক্ষার পর জানান, বৃদ্ধের ওই হাতে ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন হয়েছে। ক্রমেই তা ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। ততদিন বৃদ্ধের ওই হাত ফুলে দ্বিগুণ আকার নেয়। কামড়ে দেওয়ার জায়গাটির রং বদলে যায়। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন বৃদ্ধের। এমন পরিস্থিতিতে বৃদ্ধের হাত অপারেশন করে বাদ দেওয়ার চিন্তাভাবনাও শুরু হয়।
ওই হাসপাতালের মেডিক্যাল টিম নানাধরনের ওষুধ, এবং চিকিৎসা করে হাতের ক্ষত সারানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কোনও কিছুতেই বৃদ্ধের স্বাস্থ্যের পরিবর্তন হয়নি। অবশেষে ওই মেডিক্যাল টিম হাইপারবারিক অক্সিজেন থেরাপি শুরু করে। এই থেরাপিতে শুদ্ধ অক্সিজেন সঞ্চার করা হয় শরীরে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দ্রুত সেরে যায়। এর পাশাপাশি টানা তিন মাস ধরে চলে ফিজিওথেরাপি।
একটানা তিন মাস হাইপারবারিক অক্সিজেন থেরাপি ও ফিজিওথেরাপির সাহায্যে বৃদ্ধের হাতের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ সেরে ওঠে। কমে যায় ফোলা ভাব। ঘটনাটি ঘিরে চিকিৎসক মহলেও শোরগোল শুরু হয়। চিকিৎসকরাও ঘটনাটি পর সাধারণ মানুষকে আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
সাধারণত কুকুর, বিড়াল, পোকামাকড়ের কামড়ে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয় মানুষের শরীরে। কিন্তু মানুষের কামড়েও যে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়, তা নিয়ে কেউই অবগত নন। মানুষের কামড়েও শরীরের রক্তে ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে পারে। যা যথাযথ চিকিৎসার আওতায় না এলে, গুরুতর আকার নিতে পারে। পশুর কামড়ের মতোই মানুষের কামড় নিয়েও সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা। ঘটনাটি ঘিরে বিশ্বের একাধিক মেডিক্যাল কলেজে চর্চাও হয়েছে।
