আজকাল ওয়েবডেস্ক: অফিসে বসের কটুক্তি। শুধুমাত্র মুখোমুখি হয়েই এই কটুক্তি করেছেন, তাইই নয়। সহকর্মীদের সামনেও কটু কথা, গালিগালাজ করতে পিছপা হননি। এই অপমানের পরেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এক তরুণী। অবসাদে শেষমেশ আত্মঘাতী হন। অফিসে হেনস্থার পর তরুণীর চরম পদক্ষেপের ঘটনায় আদালত বিরাট রায় দেয়। ওই অফিসকে মৃত তরুণীর পরিবারকে ৯০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে জাপানের টোকিওতে। অফিসে বসের কটুক্তি সহ করতে না পেরে, অপমানে আত্মঘাতী হন ২৫ বছর বয়সি এক তরুণী। তরুণীর নাম সাতোমি। টোকিওর এক নামী প্রসাধনী সংস্থা ডি-আপ নামে কর্মরত ছিলেন তিনি। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ওই সংস্থায় কাজ করতে শুরু করেন। সেই বছরেই ডিসেম্বর মাসে দুঃস্বপ্নের মতো অভিজ্ঞতা হয় তাঁর।
জানা গেছে, ওই সংস্থার প্রেসিডেন্ট মিতসুরু সাকাই সাতোমিকে বৈঠকে ডাকেন। বৈঠকে তাঁরা দুজনেই ছিলেন। অফিসের অনুমতি না নিয়ে এক ক্লায়েন্টের সঙ্গে দেখা করার জন্য সাতোমিকে বকাঝকা করেন। এমনকী তাঁকে 'কুত্তা' বলেও সম্বোধন করেন বস। সাতোমিকে কথায় কথায় 'পথকুকুর' সম্বোধন করেন তিনি। এখানেই বিষয়টি থেমে ছিল না।
এরপর অফিসের সহকর্মীদের সামনেই সাতোমিকে বস বলেন, 'দুর্বল কুকুরই বড় বেশি ঘেউ ঘেউ করে!' অফিসে সহকর্মীদের সামনেও বসের কটুক্তি আর সহ্য করতে পারেননি। দিনের পর দিন হেনস্থা ও কটুক্তির জেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সাতোমি। অবসাদে ভুগতে ও শুরু করেন।
২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ডায়াগনোস করে জানা যায়, অবসাদে ভুগছেন সাতোমি। দীর্ঘদিনের এই অবসাদের জেরে অফিসেও যেতে পারতেন না। কোনও কাজ করতে পারতেন না। ছুটি নিয়ে বাড়িতেই থাকতেন। কিন্তু যত দিন গেছে, তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের তত অবনতি হয়েছে। সেই বছরেই আগস্ট মাসে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন সাতোমি। হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়। কিন্তু তিনি কোমায় ছিলেন। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে হার মানেন। ২০২৩ সালে অক্টোবর মাসে হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় তাঁর।
হাসপাতালে সাতোমি চিকিৎসাধীন থাকাকালীন তাঁর পরিবার ওই সংস্থা ও অফিসের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে। সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের আর্জিও জানান। সাতোমির মৃত্যুর পর মামলা দীর্ঘদিন ধরে চলে। ২০২৩ সালে জুলাই মাসেই সাকাই ও ডি-আপ সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে পরিবার। লাগাতার হেনস্থা, এবং সাতোমির মৃত্যুর জন্য সংস্থাকেই দায়ী করে তারা।
২০২৪ সালের মে মাসে তদন্তে জানা যায়, অফিসের টক্সিক কালচার, বসের কটুক্তি, অতিরিক্ত কাজের চাপ, হেনস্থার কারণেই সাতোমির মানসিক অবস্থার অবনতি হয়। হেনস্থার জেরে অবসাদে আত্মঘাতী হন তিনি। তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সারাইয়ের বিরুদ্ধে।
৯ সেপ্টেম্বর টোকিও জেলা আদালত মামলার রায় ঘোষণা করে। শুনানিতে সাতোমির মৃত্যুর জন্য সাকাই ও ডি-আপ সংস্থাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এরপরই বড়সড় রায় ঘোষণা করে আদালত। ডি-আপ সংস্থাকে সাতোমির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৯০ কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি। পাশাপাশি সাকাইকে ওই সংস্থা থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালতের নির্দেশের পরেই সংস্থার পদ থেকে ইস্তফা দেন সাকাই। পাশাপাশি ডি-আপ সংস্থাও প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। তাতে লেখা ছিল, 'আমাদের প্রাক্তন কর্মীর মৃত্যুর জন্য তাঁর পরিবারের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। অফিসে নিরাপত্তা, হেনস্থা দূর করতে আমরা পদক্ষেপ করেছি। আগামী দিনে অফিসের পরিবেশ নিয়েও আমরা সতর্ক থাকব।'
