আজকাল ওয়েবডেস্ক: গাজা সিটিতে সামরিক অভিযান জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় সেনাবাহিনীর অন্যতম ভরসা—রিজার্ভ সেনাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ভাঙন, যা নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার পথে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক গণহত্যা গবেষক সমিতি (International Association of Genocide Scholars) প্রকাশ্যে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে। এই প্রেক্ষাপটে গত ২ আগস্ট মঙ্গলবার প্রায় ৪০ হাজার রিজার্ভ সেনাকে ডাকা হয়, এবং ২০২৬ সালের প্রথম প্রান্তিক শেষ হওয়ার আগেই আরও ৯০ হাজারকে ডাকার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু রিপোর্ট বলছে, ডাকা হলেও অনেকেই আর সাড়া দিচ্ছেন না।
ইজরায়েলের বাধ্যতামূলক সামরিক সেবার নিয়ম অনুযায়ী, উচ্চ মাধ্যমিকের পর ১৮ থেকে ৩৬ মাস সক্রিয় দায়িত্ব পালন করতে হয়। এরপর নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত রিজার্ভ দায়িত্ব থাকে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পরপরই প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনা এবং ১ লাখ সক্রিয় সৈনিককে একসঙ্গে ডাকা হয়েছিল। সাড়া মেলে রেকর্ড ১২০ শতাংশ, এমনকি অনেকেই স্বেচ্ছায় যোগ দেন। কিন্তু দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলতে থাকায় এখন চিত্র উল্টে গেছে। বিভিন্ন হিসাব বলছে, রিজার্ভ সেনাদের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ আর ফিরছেন না। সরকারি সম্প্রচার সংস্থা ‘কান’ জানাচ্ছে, এই সংখ্যা হয়তো ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।
বামপন্থী সংবাদমাধ্যম +972mag–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত যারা রিজার্ভ দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছেন, তাঁদের মাত্র ১.৫ শতাংশ (প্রায় ১,৫০০ জন) নৈতিক বা রাজনৈতিক কারণে তা করেছেন। বাকিরা মূলত যুদ্ধের অবসান, হামাসের হাতে বন্দি ইজরায়েলের মানুষদের মুক্ত করতে ব্যর্থতা, দীর্ঘ ক্লান্তি এবং মানসিক ভাঙনের কারণে দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। একজন সাম্প্রতিক রিজার্ভ প্রত্যাখ্যানকারী নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ লিখেছেন, “রাষ্ট্রকে বাঁচানোর একমাত্র উপায়ই হচ্ছে যুদ্ধ প্রত্যাখ্যান। দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি কোনো বিশ্বাসঘাতকতা নয়।”
ইজরায়েলের ইতিহাসে রিজার্ভ সেনাদের অস্বীকৃতি নতুন নয়।১৯৮২ সালের লেবানন যুদ্ধ চলাকালে প্রায় ৩,০০০ সেনা ঘোষণা করেছিলেন যে তাঁরা প্যালেস্তাইন সমস্যা যুদ্ধ দিয়ে সমাধান করবেন না। তাঁদের মধ্যে ১৬০ জন কারাবন্দি হয়েছিলেন। এখান থেকেই জন্ম নেয় Yesh Gvul (এর একটি সীমা আছে) নামের আন্দোলন। ১৯৮৭ সালের প্রথম ইন্তিফাদার সময়ও অনেক সেনা দখলকৃত ভূখণ্ডে দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছিলেন। ২০০০ সালের দ্বিতীয় ইন্তিফাদায় মাঠ থেকে উঠে আসা অভিজ্ঞ সৈনিকদের অস্বীকৃতি আবার নতুন মাত্রা পায়। ২০২৩ সালের বিচারবিধি সংস্কারবিরোধী আন্দোলনে প্রায় ১,০০০ এলিট যুদ্ধবিমানচালক সরকারের পরিকল্পনা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্বে না ফেরার ঘোষণা করেন।
রিজার্ভ দায়িত্বে না ফেরার প্রবণতা যদি আরও বাড়ে, তবে গাজায় হামাস দমন কিংবা অন্য কোনো ফ্রন্টে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ইজরায়েলের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, পর্যাপ্ত সৈন্য ছাড়া সেনা অভিযান সম্ভব নয়। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, গত দুই বছরে দেশীয়-বিশ্বজনীন সমালোচনার মুখেও নেতানিয়াহু পিছু হটেননি। তাই কেবলমাত্র রিজার্ভ সেনাদের অস্বীকৃতি তাঁর নীতিতে বড় পরিবর্তন আনবে, এমন সম্ভাবনা আপাতত ক্ষীণ। গাজায় যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইজরায়েলের সেনা কাঠামোতেই ফাটল ধরতে শুরু করেছে। নেতানিয়াহু যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাইছেন, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—যদি পর্যাপ্ত সৈন্যই না থাকে, তবে যুদ্ধই বা টিকবে কতদিন?
