আজকাল ওয়েবডেস্ক: বয়ঃসন্ধির চৌকাঠে দাঁড়িয়ে কিশোর কিশোরীদের শরীর আর মনে হাজারো বদল হয়, অগুন্তি প্রশ্ন ভিড় করে আসে। কিন্তু উত্তর মেলে কই? পরিবারে অস্বস্তিকর নীরবতা, স্কুলে পাঠ্যসূচির বাইরে এক অলিখিত নিষেধাজ্ঞা। এই সুযোগেই জাঁকিয়ে বসেছে ইন্টারনেট-নির্ভর ভুল তথ্যের দুনিয়া। ফল? কৈশোরের বিভ্রান্তি এবং অপরিণত বয়সে নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এই প্রেক্ষাপটে ভারতে কিশোর-কিশোরীদের জন্য বিজ্ঞানসম্মত যৌন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আজ আর বিতর্কের বিষয় নয়, বরং এক সামাজিক অপরিহার্যতা।
আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র‍্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
বিশেষজ্ঞদের মতে, যৌন শিক্ষাকে শুধুমাত্র কয়েকটি জৈবিক প্রক্রিয়ার বিবরণে সীমাবদ্ধ রাখলে তার আসল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়। এর পরিধি অনেক বিস্তৃত। শরীরবিদ্যা, প্রজনন স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত সুরক্ষা, সম্মতি, লিঙ্গসাম্য এবং সুস্থ সম্পর্ক স্থাপন- এই সব কিছুই এর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ‘যৌন’ শব্দটি ঘিরে থাকা সামাজিক কুণ্ঠা ও সংস্কারের দেওয়াল এতটাই উঁচু যে, পাঠ্যক্রমে এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়াস বার বার বাধার মুখে পড়েছে।
এই নীরবতার সুযোগ নিয়ে স্মার্টফোনের পর্দায় কিশোর-কিশোরীরা যা দেখছে বা শিখছে, তার অধিকাংশই অবৈজ্ঞানিক, বিকৃত এবং বিপজ্জনক। এর ফলে বাড়ছে অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ, যৌন রোগ (এসটিআই) এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির মতো ঘটনা। জাতীয় স্বাস্থ্য সমীক্ষার পরিসংখ্যানও এই উদ্বেগের সাক্ষী। সঠিক তথ্যের অভাবে অনেক কিশোর-কিশোরীই নিজেদের শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে অহেতুক দুশ্চিন্তা ও হীনম্মন্যতায় ভোগে, যা তাদের আত্মবিশ্বাসে চিরস্থায়ী প্রভাব ফেলে।
যৌন শিক্ষার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ব্যক্তিগত সুরক্ষা। ‘ভাল স্পর্শ’ ও ‘খারাপ স্পর্শ’ ( গুড টাচ, ব্যাড টাচ ) সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা, সম্মতির গুরুত্ব এবং যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পাঠ শিশুদের কৈশোর থেকেই দেওয়া প্রয়োজন। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যে সমস্ত কিশোর-কিশোরীরা যৌন শিক্ষা পেয়েছে, তারা যৌন নিগ্রহের শিকার হলে তা দ্রুত শনাক্ত করতে এবং তার বিরুদ্ধে সরব হতে বেশি সক্ষম।
কিন্তু এর বিরুদ্ধ মতও রয়েছে। যৌনশিক্ষার বিরোধীদের একাংশের আশঙ্কা, স্কুলে যৌন শিক্ষা চালু হলে পড়ুয়াদের মধ্যে অবাধ যৌনতার প্রবণতা বাড়বে। মনোবিদ এবং সমাজকর্মীরা অবশ্য এই আশঙ্কাকে অমূলক বলেই মনে করছেন। তাঁদের মতে, বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা কৌতূহলকে ভুল পথে চালিত হতে দেয় না, বরং তাকে জ্ঞানের পথে চালিত করে। এর লক্ষ্য ভয় দেখানো বা উদ্দীপ্ত করা নয়, বরং কিশোর-কিশোরীদের সঠিক তথ্য দিয়ে ক্ষমতায়ন করা, যাতে তারা নিজেদের শরীর ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জেনে-বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র‍্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
সুতরাং, যৌন শিক্ষাকে কেবল কয়েকটি ‘নিষিদ্ধ’ শব্দের সমষ্টি হিসেবে না দেখে, তাকে কৈশোরের সার্বিক বিকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করার সময় এসেছে। সংকোচের আগল ভেঙে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এক সুরক্ষিত এবং স্বাস্থ্যকর জীবন উপহার দেওয়ার দায়িত্ব সমাজকেই নিতে হবে।