সারা দিনের ক্লান্ত শরীরে ঘুম হোক কিংবা ছুটির দিনে আয়েশ করে খাওয়াদাওয়ার পর ল্যাদ খাওয়া। বিছানার চেয়ে বড় সুখের জায়গা আর কী বা আছে! আমরা প্রতিদিন মাথা রাখি বালিশে, ব্যবহার করি বিছানার চাদর। কিন্তু এই আরামের বিছানাই জীবাণুর সবচেয়ে বড় আড্ডাখানা। কখনও ভেবে দেখেছেন দেখতে যতই পরিষ্কার ধবধবে হোক, এক সপ্তাহ না ধোয়া বিছানার চাদরে টয়লেট সিটের তুলনায় বহুগুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া জমে যায়, গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য।
সম্প্রতি ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন-এর এক গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় জানা গিয়েছে, এক সপ্তাহ না ধোয়া বালিশের কভারে টয়লেট সিটের তুলনায় হাজার হাজার গুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া জমে থাকতে পারে।
এক সপ্তাহ ধোয়া না হলে বালিশের কভারে টয়লেট সিটের চেয়ে প্রায় ১৭,০০০ গুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া জমে যায়। চার সপ্তাহ ধরে ধোয়া না হলে বালিশের কভার ও বিছানার চাদর হয়ে ওঠে লাখ লাখ ব্যাকটেরিয়ার আঁতুড়ঘর। এর মধ্যে পাওয়া গেছে গ্রাম-নেগেটিভ ও গ্রাম-পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া, এমনকী এমন কিছু জীবাণুও রয়েছে যেগুলো সরাসরি ত্বক ও শ্বাসনালীর সংক্রমণের জন্য দায়ী।
আরও পড়ুনঃ আলো ফেলে ইচ্ছে মতো মুছে ফেলা যাবে স্মৃতি! অবাক করা আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের
কেন হয় এত জীবাণু? আসলে বালিশের কভার আমাদের শরীরের ঘাম, লালা, ত্বকের মৃত কোষ ও তেল শোষণ করে নেয়। এই পরিবেশেই দ্রুত বংশবিস্তার করে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস। ধুলো-কণা ও ডাস্ট মাইটও এতে যুক্ত হয়ে যায়, যা দীর্ঘদিন ধরে জমে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
স্বাস্থ্যের কী ক্ষতি হতে পারে
*ত্বকের সমস্যা: ব্রণ, একজিমা, চুলকানি, এমনকি ক্ষতস্থানে সংক্রমণ।
*শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জি: ডাস্ট মাইট ও ফাঙ্গাস অ্যাজমা ও নাক-গলার অ্যালার্জি বাড়াতে পারে।

*চুল ও স্ক্যাল্পের সংক্রমণ: রিংওয়ার্ম বা অন্যান্য ফাঙ্গাল ইনফেকশন ছড়াতে পারে।
*রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে বিপদ: যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদের ক্ষেত্রে এই জীবাণুগুলো মারাত্মক হতে পারে।
আমরা অনেকেই ঘর পরিষ্কার বা টয়লেট জীবাণুমুক্ত করার দিকে নজর দিই, কিন্তু গবেষণা বলছে আমাদের বালিশের কভারই হতে পারে সবচেয়ে বড় জীবাণুর উৎস। সুস্থ থাকার জন্য তাই নিয়মিত বিছানার চাদর ও বালিশের কভার ধোয়া আর বদলানো এখন আর বিকল্প নয়, বরং বাধ্যতামূলক অভ্যাসে পরিণত করা জরুরি। সপ্তাহে অন্তত একবার বালিশের কভার ও চাদর গরম জলে ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুতে হবে। যাদের অ্যালার্জি বা ত্বকের সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে কভার আরও ঘন ঘন পরিবর্তন করা জরুরি। প্রয়োজনে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ফ্যাব্রিক বা প্রোটেক্টিভ কভার ব্যবহার করা যেতে পারে।
